বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশে অর্থনীতির অভাবনীয় উন্নতির পাশাপাশি সব খাতে দারুনভাবে এগিয়েছে। এর মধ্যে সেবামূলক খাত বেশি এগিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর মগবাজার মাইক্রোক্রেডিট রেগুরেটরি অথরিটি (এমআরএ) কনফারেন্স রুমে বেসরকারি এনজিও লাইট হাউসের আয়োজনে ও ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় অ্যাডভোকেসি সভায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুরেটরি অর্থরিটির (এমআরএ) কার্যকরী ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউল্লাহ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এমন একটি সামাজের স্বপ্ন দেখে, যেখানে জাতি, বয়স, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং যৌন পরিচয় নির্বিশেষে সকল মানুষ মর্যদার সঙ্গে সুস্থ জীবন উপভোগ করতে পারবে।
লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদের পরিচালনায় ও এমআরএর নিবার্হী পরিচালক মো. মাজেদুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহিলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আয়েশা সিদ্দিকা। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, এমআরএর পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, লাইট হাউসের কর্মকর্তাবৃন্দ, তৃতীয় শ্রেণীর প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে মো. ফসিউল্লাহ বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে একজন তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীর সঙ্গে দেখা হয়। বঙ্গবন্ধু তাকে চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই তিনি সপরিবারে শহীদ হন। তবে বর্তমানে তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাচ্ছেন। সমাজের প্রতিটি স্তরে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে সংযুক্ত করতে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, এক সময় হিজড়াদের মানুষ ঘৃণা করতো, যৌন শিক্ষার কোনো সুযোগই ছিল না। অথচ সময়ের ব্যবধানে হিজড়াদের আজ সরকারি-বেসরকারি অফিসে চাকরি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এর পরিমানণ কম হলেও একটা সময় আসবে যখন প্রতিটি অফিসে একজন হলেও তৃতীয় লিঙ্গ থেকে চাকরির সুযোগ পাবে। তাদেরকে সেভাবেই শিক্ষার সুযোগ দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে। আর যৌন শিক্ষার ব্যাপারেও ব্যাপক ভুমিকা নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, সরকার কিশোর কিশোরীদের জন্য কৌশলপত্র ২০১৭-২০৩০ প্রনয়ন করেছে। শুধু তাই নয়, উঠতি বয়সি শিশুদের শিক্ষার জন্য ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে যৌন শিক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক শিক্ষক এ বিষয়ে শিক্ষা দিতে লজ্জা পান। এ ক্ষেত্রে বেসরকারিভাবে বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। যার মধ্যে লাইট হাউজ অন্যতম। তিনি বলেন, লাইট হাউজের মতো অন্য সব এনজিওকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হলে সমাজের অবক্ষয় থেকে কিছুটা হলে উপকৃত হবে।
মো. ফসিউল্লাহ বলেন, দেশের প্রাণশক্তি হলো তরুণ সমাজ। দেশের বিশাল এই যুব সমাজকে রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিসহ সব বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে হবে। এতেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। পরিকল্পিত পরিবার গঠনের পাশাপাশি, নিরাপদ ও সুষ্ঠু প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সকলের জন্য নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। তারপরেও এর পরিধি আরো বাড়াতে হবে।
মহিলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, জেন্ডার সম্পর্কিত নেতিবাচক মনোভাব পোষণকারী জনগোষ্টির মনোভাব পরিবর্তন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে বাল্য বিবাহ ও অল্প বয়সে সন্তান গ্রহণ ইত্যাদি। যুববান্ধব স্বাস্থ্য সেবাগুলির চাহিদা বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে হবে যাতে অভিাববকগণ যুব ও কিশোর-কিশোরীদের কেন্দ্রগুলোতে যেতে উৎসাহিত করতে পারেন। ছেলেদের যৌন প্রজনন স্বাস্থ্যের অধিকার মেয়েদের চেয়ে বেশী অবহেলিত। তিনি আরো বলেন, সরকারের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরেও আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে পরিবর্তনের।
লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান মো. হারুন অর রশিদ বলেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অর্থরিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে মা ও নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যার মাধ্যমে প্রয়োজনে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা গ্রহণের পরিমান বৃদ্ধি পায়। সংস্থাগুলোর সভাতেও কিশোর কিশোরীদের কৈশোরকালীন সমস্যাগুলি কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে সমাধান, ঝুকিপূর্ণ যুব ও কিশোর কিশোরীদের সেবার আওতায় আনা, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে যুব, কিশোর কিশেরীদের সচেতন করা, কৈশোরকালীন সময়ে গর্ভধারন না করতে সচেতন করা, নব দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনা সেবার সহিত সংশ্লিষ্টতা বাড়বে।
অ্যাডভোকেসি সভায় জানানো হয়, সমাজিক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে যুব ও কিশোর কিশোরীরা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন এবং সেবা গ্রহনে উৎসাহিত করতে সুখী জীবন প্রকল্প গ্রহন করা হয়। যার মেয়াদ ২০২১ থেকে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে শেষ হবে। প্রকল্প এলাকা গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর, কাপাশিয়া, কালিগঞ্জ ও শ্রীপুর, টঙ্গী (থানা), গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড (১৬, ১৭, ১৮, ১৯ এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ড), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ৪১ নং ওয়ার্ড ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড।
আজকালের খবর/আরইউ