রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর দূরত্ব কমাতে চালু হয় সুনামগঞ্জ-পাগলা-জগন্নাথপুর- রানীগঞ্জ-আউশকান্দি-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক। সিলেট অঞ্চলের দীর্ঘতম রাণীগঞ্জ সেতু উদ্বোধনের পর এই সড়কের গুরুত্ব বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ীদের অর্থসাশ্রয়ী যোগাযোগ রক্ষা হয় পুরো দেশে। কিন্তু এসব জরাজীর্ণ বেইলি সেতু এই সড়কের অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বেইলি সেতুতে জোড়াতালি দিয়ে কাজ করায় কয়েকদিন পর পর সেতুতে ফাটল ধরে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।
অপরদিকে, সুনামগঞ্জের অপার সম্ভাবনায় ভাটা পড়েছে। গেল চার মাসে বমবমি ও কাঁটাগাঙের সেতু চারবার ভাঙে। কিন্তু সওজ কর্তৃপক্ষ রড ও তার দিয়ে কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর কাজ সম্পন্ন করে। সম্প্রতি জগন্নাথপুর অংশে কাটাগাঙের ওপর জরাজীর্ণ বেইলি সেতু ভেঙে মালবাহী ট্রাকসহচালক ও হেলপার মারা যান। রাজধানী ঢাকা, হবিগঞ্জ জেলা থেকে যাত্রী ও মালামাল নিরাপদ আসার জন্য ওই সেতুগুলো খুলে টেকসই আরসিসি সেতু করার দাবি স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ থেকে রাজধানীর দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার কমাতে পাগলা- জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ সৈয়দপুর সড়কে কাজ হয়েছে ৩০০ কোটি টাকার। ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কুশিয়ারা নদীর ওপর নির্মিত রাণীগঞ্জ সেতুসহ সুনামগঞ্জ থেকে রানীগঞ্জ অংশে আটটি সেতুর উদ্বোধন করেন। তবে দুটি বেইলি সেতু খুলে আরসিসি সড়ক না হওয়ায় সুনামগঞ্জ-পাগলা-জগন্নাথপুর-রাণীগঞ্জ অংশ এখন মরণফাঁদ। সম্প্রতি জগন্নাথপুরের কাটাগাঙের বেইলি সেতু দুর্ঘটনার দুজন মারা যান। এর আগে গত ২৮ মার্চ সুনামগঞ্জগামী একটি তেলবাহী লরি সড়কের শান্তিগঞ্জ এলাকার বমবমি বেইলি সেতু পার হওয়ার সময় সামনের অংশের তিনটি পাটাতন ভেঙে যায়।
এদিকে, হবিগঞ্জ জেলায় যাতায়াত মাধ্যম ইনাতগঞ্জে প্রবাহিত কুশিয়ারা নদীর ওপর বেইলি সেতুটিও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জগন্নাথপুর বাজারসহ সুনামগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ীরা এই সেতু দিয়ে হবিগঞ্জ থেকে মালামাল নিয়ে আসেন। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় দুর্ঘটনার শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ গত এক মাস ধরে শান্তিগঞ্জ উপজেলার বমবমি বেইলি সেতু ও সম্প্রতি জগন্নাথপুর উপজেলার কাটাগাঙের বেইলি সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করে। বমবমি সেতুতে আরসিসি ঢালাই দেওয়ার জন্য এর পাশে ডাইভারশন সেতুর কাজ চলছে।
সরেজমিনে জরাজীর্ণ বমবমি সেতু ঘুরে দেখা যায়, সেতুর প্রশস্ততা খুবই কম। জীর্ণশীর্ণ পাটাতনগুলো ফাঁক। একটি গাড়ি উঠলে হেঁটে যাওয়ার রাস্তা নেই। নিচের পাটাতনের নাট-বল্টু খুলে গেছে। পাটাতনগুলো মরিচা ও জংধরা। যানবাহন যাতায়াতে বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে। সেতুর ভেঙে যাওয়া অংশের নিচ দিকে স্টিলের সঙ্গে তিন সুতার রড ঝালাই করে ও তার বেঁধে সংস্কার করা হয়।
বমবমি সেতুর পাশের ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও গ্রামের বাসিন্দা ইফতার মিয়া বলেন, এই সেতুতে গত দুই মাসে দুটি দুর্ঘটনা ঘটে। এর আগেও একাধিকবার দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে রড ও তার দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কারকাজ হয়। আরসিসি সেতুর কাজ কতটুকু সঠিক হবে এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ এর আগেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এই সড়কের জগন্নাথপুর ও ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী কোন্দানালা খালের ওপর কোন্দানালা সেতুর পাঁচটি গার্ডার ধসের ঘটনা ঘটে।
এদিকে সরেজমিনে সদ্য ধসেপড়া জগন্নাথপুরে কাটাগাঙের ওপর বেইলি সেতু ঘুরে দেখা যায়, সেতুটি ফের চালু করতে ভাঙা অংশে কাজ চলছে।
স্থানীয়রা জানান, চলতি মাসের ১৬ জুলাই সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই সেতুর পূর্বপাড়ে চারটি পাটাতনের জোড়া খুলে ফাঁক হয়ে যায়। এছাড়া একটি পাটাতন আরেকটির ওপর উঠে গেলে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকার পর কর্তৃপক্ষ নামেমাত্র রড ও তার লাগিয়ে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে। সম্প্রতি সেতুর ওই অংশ ভেঙে ট্রাক পানিতে তলিয়ে গেলে চালক ও হেলপার নিহত হন। এ ঘটনায় মূল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু মূল সেতু নিয়েও সংশয় রয়েছে।
জগন্নাথপুর বাজারের ব্যবসায়ী শাকিব আহমেদ জানান, সেতুর শেষ অংশের নিচের দিকে তার ও রড দিয়ে সংস্কার করার ওই অংশ ভেঙে পানিতে তলিয়ে যায়। তবে মূল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তিনি জগন্নাথপুর-আউশকান্দি সড়কের সব বেইলি সেতু খুলে আরসিসি সেতু নির্মাণের দাবি জানান।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, বমবমি সেতুতে আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য এর পাশে ডাইভারশন সেতুর কাজ চলছে। কাটাগাঙের বেইলি সেতুর পাশেও একটি আরসিসি সেতু হবে, এই সেতুর বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। এসব সেতু দিয়ে ১০ টনের অধিক মালামাল বহন না করার জন্য সাইনবোর্ড দেওয়া আছে।
আজকালের খবর/ওআর