বৃহস্পতিবার ১ মে ২০২৫
গুরুশিষ্যের বন্ধুত্ব
এস ডি সুব্রত
প্রকাশ: শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩, ৩:১৯ PM
দীপায়ন শুভ্র। শুভ্র নামেই সবার কাছে পরিচিত। শীত আসার পূর্ব মুহূর্ত থেকে ভাবছে চট্টগ্রাম বেড়াতে যাবে। সেখানে তার এক ছাত্র আছে, মামুন। সে প্রায়ই ফোন করে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। বিয়ের পর শুভ্র সাধারণত একা বেড়াতে যায় না। আনিকাকে সঙ্গে নিয়ে যায়। তো শুভ্র বেশ কিছু দিন যাবত সহধর্মিণী আনিকা কে রাজি করানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সফল হচ্ছে না। কিছুতেই রাজি করাতে পারছেন না। এখন লং জার্নি করতে চায় না আনিকা। অথচ একটা সময় ছিল শুভ্র কোথাও যাবার কথা শুনলেই আনিকা যাওয়ার বায়না ধরত। ইদানিং কোথাও যেতে চায় না আনিকা।
অগ্যতা একাই যেতে হয় শুভ্রকে। সিলেট থেকে পাহাড়িকা ট্রেনে বন্দর নগরীতে যায় শুভ্র। সেখানে একটি হোটেলে উঠে আলকরনে। হোটেল আল মোস্তফা।
ফেসবুকে আসক্তি আছে শুভ্রর। লেখালেখির কারণেই মূলত এই আসক্তি। নিজের মনের ভাব অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সবচেয়ে কার্যকর ও সড়জ মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক। অতি সহজেই নিজের লেখা পোঁছে দেওয়া যায় বন্ধুদের কাছে।
হোটেলে বসেই একটা লেখা পোস্ট করে শুভ্র। লেখাটি মামুনের চোখে পড়ে। পুরো নাম আবদুল্লাহ আল মামুন। শুভ্রর ছাত্র। শুধু ছাত্র বললে ভুল হবে। ভালো বন্ধুও বটে। একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে উচ্চ পদে চাকরি করছে।
শুভ্রর মোবাইল বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে মামুনের ফোন।            স্যার, আপনি কোথায়? মামুনের কণ্ঠস্বর ভেসে আসে অপর প্রান্ত থেকে।           আমি চট্টগ্রামে। কাল আসলাম। একটা হোটেলে এ আছি আলকরনে।
তাহলে লাঞ্চের পর আমরা বেড়িয়ে পড়ব। আমি অফিসের গাড়ি নিয়ে আসব। আপনি কোন হোটেলে উঠেছেন, স্যার?
হোটেল আল মোস্তফা। শুভ্র জানিয়ে দেয়।
ঠিক আছে স্যার আমি এসে ফোন দিব। আপনি রেডি থাকবেন।
শুভ্র সকালে নাস্তা খেয়ে হাঁটতে থাকে রেলস্টেশন এলাকায়। পরে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারে যায়। সেখান থেকে ফিরে এসে রুমে যায়। গোসল সেরে নিচে যায় লাঞ্চের জন্য। রূপচাঁদা মাছ আর চিংড়ি চয়েছ করে। লাঞ্চ সেরে রূমে এসে বিশ্রাম নেয়। বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। লং জার্নি। তাই শরীর এখনো ঠিক হয়নি।
ফোনের রিংটোন এ শুভ্রর ঘুম ভাঙে। ফোন রিসিভ করে। মামুনের ফোন।
স্যার, আমি এসে গেছি। আপনার হোটেলের নিচে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছি।
ঠিক আছে, আমি আসছি। শুভ্র ঝটপট রেডি হয়ে নিচে যায়।
মামুন গাড়ি থেকে নেমে এসে প্রিয় স্যার কে জড়িয়ে ধরে।
বিশ বছর পর গুরু শিষ্যের দেখা। কেউই আবেগ ধরে রাখতে পারছে না। শুভ্রর প্রবল আবেগে বেশ কিছুক্ষণ জড়িয়ে থাকে প্রিয় ছাত্র কাম বন্ধুকে।
মামুনের বড় বোন মুক্তা ও ছোট ভাই কবিরও শুভ্রর ছাত্র। ওদের পরিবারের সাথে শুভ্রর আত্মার বন্ধন তৈরি হয়ে গিয়েছিল। শুভ্র মামুনের কাছে ওদের পরিবারের খবর নেয়। মুক্তার ছোট মেয়েটির কথা বেশ মনে পড়ছে শুভ্রর। ও তখন খুব ছোট, কোনোরকম কথা বলতে বলতে পারে। শুভ্র একদিন ওদের বাসায় যায়। সবাই ছিল বাসার ভেতরে। ও বাইরে খেলছিল। শুভ্রকে দেখে দৌড়ে ঘরে যায়। ওর আম্মুকে নিয়ে আসে আর বলে তোমার স্যার এসেছে। সবাই তো অবাক। শুভ্রর অবাক হয় এত ছোট মেয়ে এতটা বুদ্ধি রাখে। মেয়েটির নাম মনে করতে পারছে না শুভ্র। তবে ঘটনা টা স্পষ্ট মনে আছে। মামুনের কাছে জানতে পারে ওর বিয়ে হয়ে গেছে।
স্যার, কোথায় যাবেন বলুন?
মামুন নীরবতা ভাঙে।
চল, পতেঙ্গা সি বিচে যাব। আমার খুব পছন্দের জায়গা। অনেক আগে গিয়েছিলাম।
ঠিক আছে, স্যার গাড়ি তে উঠুন।  
দুজন গল্প করবে বলে পিছনের সিটে বসে একসাথে। চমৎকার রাস্তা ধরে গাড়ি চলতে থাকে। শেষে ঝাউবনের ধারে গাড়ি থামে। দুজনে নেমে বিচে যায়। সমুদ্র স্নান করে, ঘোড়ায় চড়ে, ছবি তুলে। ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক ছাপিয়ে দুজনে বন্ধুত্বের অনন্য সম্পর্কের মাঝে হারিয়ে যায়। এমন বন্ধুত্ব নজিরবিহীন।
হঠাৎ শুভ্র অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। দীর্ঘ দিন পর একজন মেয়ে বন্ধুর সন্ধান পায় শুভ্র। নাম অজান্তিকা। অনন্য অসাধারণ মেয়ে। শুভ্র তার সাথে সবকিছু শেয়ার করে। ফেসবুকে পরিচয়। দেখা হয়নি কখনো। দুজন দুই প্রান্তে। একজন হাসনের দেশে। আরেকজন চাঁদের দেশে। এমন বন্ধুকে কখনো হারাতে চায় না শুভ্র।
শুভ্রর মন খারাপের বিষয়টি মামুনের দৃষ্টি এড়াতে পারে না
স্যার কি হল? মুড অফ কেন। হঠাৎ অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন। কোনো সমস্যা?
না, হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল। বুঝতে পারছি না।
স্যার সংকোচ কেন? বলুন। শেয়ার করলে মনটা হালকা হবে।
মামুন, অজান্তিকার কথা মনে পড়ে গেল হঠাৎ। দুদিন ধরে যোগাযোগ নেই।
অজান্তিকা কে, স্যার?
আমার একজন ভালো বন্ধু। আমি সবকিছু ওর সাথে শেয়ার করি। আমার মন খারাপ হলেই ওর দ্বারস্থ হই। অসাধারণ, মানবিক মানুষ।
ও তাই বলেন, তাহলে ফোন দেন। কথা বলেন। সব ঠিক হয়ে যাবে।
এখন তো ওর অফিস আওয়ার। ও খুব ব্যস্ত থাকে। নিষ্ঠাবান সৎ অফিসার। কাজে ফাঁকি দেওয়া একদম পছন্দ করে না।
যা হোক একবার ফোন দেন। অন্তত এক মিনিট কথা বলেন।
শুভ্র মামুনের কথা ফেলতে পারে না। ফোন দেয়।
প্রান্ত থেকে মায়াবী কণ্ঠস্বর, কেমন আছেন আপনি? আমি ব্যস্ত ছিলাম। তাই নক করতে পারিনি।
আমি চট্রগ্রামে বেড়াতে এসেছি। এই মুহূর্তে পতেঙ্গা আছি আমার ছাত্র ও ভালো বন্ধু মামুনের সাথে। তোমাকে না পেয়ে মন খারাপ লাগছিল। তাই ফোন দিলাম।
ভালো করেছেন। এবার আনন্দ করুন। এখন খুশি তো?
 হ্যাঁ। শুভ্রর চোখে মুখে আনন্দের অভিব্যক্তি।
কী স্যার, মন ভালো হয়েছে।
হ্যাঁ, শুভ্রর প্রাণোচ্ছ্বল জবাব।
আবার গুরু শিষ্য আনন্দে মেতে মেতে উঠে ঝাউবনের ধারে নীল সাগরের তীরে। হারিয়ে যায় এক স্বপ্নীল ভুবনে।

আজকালের খবর/আরইউ