
সুশীল সমাজের কাছে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি প্রশ্ন রাখেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময় মানবাধিকার কোথায় ছিল?
রবিবার (১৩ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘ষড়যন্ত্রের উৎপাটনই শোকাবহ আগস্টের অঙ্গীকার’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন রাখেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সুশীল সমাজের বিশাল অংশ মানবতার কথা বলে। বিভিন্ন দেশ এসে যখন মানবাধিকারের কথা বলে তখন তারা সঙ্গ দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে তাদের কথা নেই। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা নিয়ে কথা নেই। ২০১৩-১৪ সালে পুড়িয়ে মানুষকে হত্যা করা হলো, পঙ্গু করে দেওয়া হলো- এতে কারো মানবাধিকার (নিয়ে কথা) নেই, এটা কারো চোখে পড়ল না।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সকল সূচকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে পরাজিত শক্তি বাংলাদেশকে পেছনে টেনে নেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সরকার বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
ডা. দীপু মনি বলেন, পরাজিত শক্তির বড় একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়৷ এ কারণে বর্তমানে ষড়যন্ত্রের আন্তর্জাতিক জাল পাতা হচ্ছে। আমাদের প্রতিনিয়ত এসব জাল কেটে বের হতে হবে। সাইবার জগতে বড় যুদ্ধ হচ্ছে, আমাদের সকলকে এ যুদ্ধের জবাব দিতে হবে। পাকিস্তানপ্রেমী যারা আছেন, পাকিস্তানের এখন যে অবস্থা তারাও তো এখন পাকিস্তানে যেতে রাজি হবেন না।
দীপু মনি বলেন, এক সময় রাষ্ট্রীয় মদদে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হত। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হত। শেখ হাসিনার সরকার সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করে না। বরং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের ভোট ও ভাতের সংগ্রামে কাজ করে যাচ্ছে এ সরকার।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশকে স্বাধীন করেই যাননি, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের যা যা প্রয়োজন তা তিনি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে করে গেছেন। আমরা এখন যে বিষয়েই ভালো একটি উদ্যোগ নিতে যাই, দেখি বঙ্গবন্ধু এটির সূচনা করে গেছেন। এটি বিস্ময়কর একটি বিষয়। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি, তারা ও তাদের বংশধরেরা এখনো এদেশে আছে৷ তারা এখনো বসে নেই, ষড়যন্ত্র করছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১৯৭০-এর নির্বাচন বলছে বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতা, তার স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার অধিকার ছিল। বঙ্গবন্ধুর পথ ধরে তার কন্যা শেখ হাসিনাও ভোট ও ভাতের অধিকার দিয়ে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেছেন। ষড়যন্ত্র সেদিনও ছিল, আজও আছে। ষড়যন্ত্রের নানান দিক আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একটি বড় বিষয়৷ পিলখানার ঘটনায় আমরা দেখেছি কীভাবে সেনাবাহিনীকে সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে এসে এসব ষড়যন্ত্রকারীকে রুখে দিতে হবে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রশিদ আসকারী বলেন, হেনরি কিসিঞ্জার তার বইয়ে বলেছিলেন খন্দকার মোশতাক চেয়েছিলেন দেশ যাতে স্বাধীন না হয়৷ দেশ স্বাধীনের পরও আমরা আবার ষড়যন্ত্র দেখতে পাই। এর সঙ্গে জিয়াউর রহমান ও সিআইএ জড়িত ছিল। বর্তমানেও ডেভিড বার্গম্যান ও পিনাকী ভট্টাচার্যের মতো ষড়যন্ত্রকারীদের আমাদের কলম যুদ্ধে পরাজিত করতে হবে, তাদের মুখোশ উন্মোচিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, দীর্ঘদিন আমাদের গোয়েবলসীয় কায়দায় সঠিক ইতিহাস থেকে দূরে রাখা হয়েছে৷ আমরা সঠিক ইতিহাস জানতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় অনেক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন৷ বঙ্গবন্ধু মার্কিন সমাজ্রবাদের কুনজরে পড়েছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্যেই বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করেছেন। বঙ্গবন্ধু আপস করেননি বিধায় মার্কিনীরা খাদ্য সহয়তা দেয়নি। আর এজন্যই তখন দুর্ভিক্ষ হয়েছিলো। সে দুর্ভিক্ষ প্রাকৃতিক নয়, বরং মানবসৃষ্ট ছিল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমরা দেখেছি সাধারণত ক্ষমতা কেড়ে নিতেই অভ্যুত্থান হয়। তবে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কেবল ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার জন্য করা হয়নি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে পূর্ব পাকিস্তান করা হল। গোলাম আজমরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আবারো দুই পাকিস্তানকে এক করার মতো ঘৃণ্য অপচেষ্টা করেছিলেন। ১৫ আগস্ট ছিল সকল পরাজিত শক্তির সম্মিলিত আক্রমণ। এসকল পরাজিত শক্তি এখনো ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নে লেগে আছে। তাদের সকল ষড়যন্ত্র আমাদের নস্যাৎ করে দিতে হবে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সকল প্রকার মানুষকে স্পর্শ করার দূরদর্শিতা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল আন্দোলনকে পূর্ণতা দিয়েছে। ভাষার সঙ্গে ভাত-কাপড়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হতে পেরেছেন। তিনি পরিণত হয়েছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিতে। তার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই ১৭ ও ২১ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড। এ সকল ষড়যন্ত্রকারীরা আজো ষড়যন্ত্র করছে। এদের বিষয়ে তরুণদের সচেতন থাকতে হবে, রুখে দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মিল্টন বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দৈনিক বাংলা ও নিউজ বাংলা’র মিডিয়া ডিরেক্টর মো. আফিজুর রহমান, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) প্রমুখ ।
আজকালের খবর/আরইউ