বুধবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বাবা-মায়ের কবরের পাশে শায়িত হলেন কবি রফিক
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩, ২:৫৩ পিএম
বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে নিজ বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন একুশে পদক প্রাপ্ত কবি মোহাম্মদ রফিক।  

এর আগে সোমবার (০৭ আগস্ট) বেলা ১১টায় চিতলী-বৈটপুর এলাকায় উদ্দীপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতনে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

চিকিৎসার জন্য বরিশাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে রবিবার (০৬ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি মোহাম্মদ রফিক। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দুই ছেলে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

কবির শেষ বিদায়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ, কবির বোন জামাই শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আমিনুল হক, কবির বোন গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সেলিনা পারভীন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সবিতা ইয়াসমিন, কবির ভাই প্রকৌশলী মো. শফিক, কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধস্বত্ত্ব রফিক, কবির বিভিন্ন স্বজন, লেখক অধ্যাপক প্রশান্ত মৃধা, সামছউদ্দিন নাহার ট্রাস্টের প্রধান সমন্বয়ক সুব্রত কুমার মুখার্জীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, উদ্দীপন বদর সামছু বিদ্যা নিকেতনসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ কবির গুনগ্রাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রিয় কবিকে হারিয়ে শোকাহত হয়ে পড়েছেন কবির শিক্ষার্থী, স্বজন ও স্থানীয়রা। কবির ভাই প্রকৌশলী মো. শফিক বলেন, আমাদের আট ভাইবোনদের মধ্যে কবি মোহাম্মদ রফিক ভাই সবার বড় ছিলেন। তিনি শুধু আমাদের বড় ভাই ছিলেন না, তিনি আমাদের সবার অভিভাবক ছিলেন। তার মৃত্যুতে আমরা অভিভাবক শূন্য হলাম।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মমিনুল ইসলাম বলেন, স্যার একজন ভাল ও নিরহংকার মানুষ ছিলেন। দেশের জন্য তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দেশের জন্য তার কলম চলত সব সময়। স্যারের অবদান ভোলার নয় দাবি করেন সাবেক এই শিক্ষার্থী।

নামাজে জানাজা ও দাফন শেষে বাবার জন্য সবাইকে দোয়া করার অনুরোধ করেন কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধসত্ত্ব রফিক।
ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন ও কবিতায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যুগিয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন কবি মোহাম্মদ রফিক।

কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মা রেশাতুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক ছিলেন সবার বড়। মোহাম্মদ রফিকের শৈশব কাটে বাগেরহাটে। মেট্রিক পাশ করে ঢাকার নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন, কিন্তু পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন মোহাম্মদ রফিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়, কিন্তু এম এ পরীক্ষার জন্য তিনি ছাড়া পান। ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে  কাজ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি দীর্ঘ সময় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০০৯ সালের ২৯ জুন তিনি অবসরে যান। অবসরের পর কবি মোহাম্মদ রফিক রাজধানীর মোহাম্মাদপুরে বসবাস করতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগসহ বিভিন্ন শরীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। গেল সপ্তাহে কবির ছোট ছেলে অধ্যাপক ড. শুদ্ধসত্ত্ব রফিকের সঙ্গে কবি গ্রামের বাড়িতে আসেন। গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের চিতলীতে অবস্থানকালে রবিবার (০৬ আগস্ট) সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তখন প্রথমে বাগেরহাট এবং পরে বরিশাল নেওয়া হয় কবিকে। বরিশালের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিভিন্ন পরীক্ষার পর কবির হার্টের সমস্যাসহ বেশি কিছু শারীরিক জটিতলা ধরা পড়লে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা কবিকে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রওনা হওয়ার পর পথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

আজকালের খবর/বিএস 








সর্বশেষ সংবাদ
মার্কিন শ্রমনীতি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-হয়রানি
একদিনে দশটি পথসভা, উঠান বৈঠক ও একটি জনসভা করেন সাজ্জাদুল হাসান এমপি
নতুন বছরে সুদহার বাড়ছে
শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই আজকের উন্নত বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
রাজপথের আন্দোলনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে: মুরাদ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকায় ইসলামী ব্যাংক
হাইকোর্টের ৫২ বেঞ্চ গঠন করলেন প্রধান বিচারপতি
নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
ইতিহাসের মহানায়ক: একটি অনন্য প্রকাশনা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft