প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩, ৮:২৯ PM
রাজশাহী মহানগরীর পবা এলাকায় সুলতান নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার পর চলন্ত ট্রাকের নিচে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রাজশাহী মহানগরীর এয়ারপোর্ট থানার পশ্চিম বাঘাটা গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে সবুজ আলী, পবা উপজেলার মহানন্দাখালী গ্রামের মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে কাওসার আলী, একই এলাকার মৃত শহিদুল্লাহের ছেলে সজল ও তার স্ত্রী সুইটি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সজল খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মৃত সুলতান রাজশাহী জেলার বাঘা থানার আড়ানী গ্রামের নবীর আলীর ছেলে। আসামিরা সুলতানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও তাদের শেষ রক্ষা হলো না।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, মৃত সুলতান ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। দুই মাস আগে মোবাইল ফোনে আসামি সজলের স্ত্রী সুইটির সঙ্গে সুলতানের পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে সুলতান দেখা করার জন্য প্রায়ই সুইটিকে প্রস্তাব দেন। সুইটি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে সুলতান সুইটির তিন বছরের বাচ্চার ক্ষতি করার হুমকি দেন। সুইটি বিষয়টি তার স্বামী সজলকে জানালে সজল সুলতানকে শায়েস্তা করার জন্য পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক আসামি সজল তার স্ত্রী সুইটির মাধ্যমে সুলতানকে রাজশাহীতে দেখা করার জন্য আসতে বলেন। গত ১ জুলাই সুলতান সুইটির সঙ্গে দেখা করার জন্য রাজশাহীতে আসেন। তখন সুইটি তাকে পবা ও তানোর থানার সীমান্তবর্তী নাইস গার্ডেনে নিয়ে যান। নাইস গার্ডেন তারা পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনা মোতাবেক সজল, তার বন্ধু সবুজ ও চাচা আনারুলকে সঙ্গে নিয়ে নাইস গার্ডেনে প্রবেশ করে সুলতানকে জোরপূর্বক অটোরিকশায় করে নওহাটার দিকে নিয়ে যায়। এসময় আসামিরা তাকে মারপিট করে এবং তার পরিবারের লোকজনদের আসার জন্য বলতে বলে। এতে সুলতান রাজি না হলে দুপুরে পবা থানার বাগসারা বাজার পার হয়ে ফাঁকা জায়গায় অটোরিকশার ভিতরে আসামিরা সুলতানের হাত, পা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে হত্যার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য দুর্ঘটনার নাটক সাজান। সেই মোতাবেক তারা রাস্তায় চলন্ত ট্রাকের সামনে সুলতানের মৃতদেহ ফেলে দেন। ফলে ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সুলতানের মাথায় জখম হলে আসামিরা পালিয়ে যান। আশপাশের সাধারণ লোকজন ঘটনাস্থলে এসে ট্রাকের সঙ্গে ইজিবাইকের দুর্ঘটনার কারণে সুলতান মারা গেছে বলে পবা থানা পুলিশকে খবর দেন।
সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় লাশের কপালের বাম পাশে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন থাকায় সন্দেহ হলে পুলিশ লাশের পোস্টমর্টেম করায়। গত ২২ জুলাই চিকিৎসকরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট থেকে জানা যায় সুলতানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মৃত সুলতানের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা কয়েক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে গত ২৪ জুলাই পবা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। এরপর আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামিদের শনাক্ত করা হয়। পরে নিজ নিজ বাড়ি থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত আসামি সজল ও তার স্ত্রী সুইটির রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে আসামি সজল ২ আগস্ট খুনের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
আজকালের খবর/ওআর