প্রকাশ: রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩, ৭:০৩ PM
প্রস্তাবিত বাজেট পুনর্বিবেচনা না করলে আগামীতে জমি এবং ফ্ল্যাটের দাম বৃদ্ধি পাবে। কারণ প্রস্তাবিত বাজেটে জমি রেজিস্ট্রেশনকালে উৎসে আয়কর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্ট, পাথর, টাইলস, লিফট, সিরামিক, গ্লাস, সুইচ-সকেট, ক্যাবল, কিচেনওয়্যারসহ কমপক্ষে ১০-১২টি পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এসব পণ্যের দাম সহনশীল না রাখলে আবাসন শিল্পে সংকট তৈরি হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে ফ্ল্যাটের মূল্য আরেক দফা বাড়বে। নতুন ড্যাপের ‘ফার’ হ্রাসসহ নানা কারণে সমগ্র গৃহায়ন খাতে আবাসন নির্মাণ এবং বিক্রয় পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। সব মিলিয়ে সামনের দিনগুলোতে অনেকেই ফ্ল্যাট কেনার সক্ষমতা হারাবেন এবং আবাসন ব্যবসায়ীরা ক্রেতা হারাবেন। নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা আরো কঠিন হয়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে বাড়ি ভাড়ায়। ফলে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে স্বল্প আয়ের কর্মজীবদের কষ্ট আরো বাড়বে। মৌলিক চাহিদার অন্যতম সবার জন্য যে আবাসন এই শ্লোগান এখন শ্লোগানই থেকে যাবে।
স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনাপ্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়নি। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিনাপ্রশ্নে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় এসেছে। সরকার দুই হাজার কোটি টাকার উপরে রাজস্ব পেয়েছে।
এবার বাজেটে অনেক এলাকায় ২০ লাখ টাকা প্রতি কাঠা সরকারি ট্যাক্স ধরা হয়েছে। অথবা চুক্তি মূল্যের আট শতাংশ। এটা আগে চার শতাংশ ছিল। আবার শর্ত আছে যেটি বেশি হবে সেটি দিতে হবে। তার মানে কমপক্ষে কাঠা প্রতি ২০ লাখ টাকা ট্যাক্স। ক্ষেত্রে বিশেষ এটা আরো বেশি দিতে হবে। এটা গেলো জমির ক্ষেত্রে। ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে আগে ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ ট্যাক্স ছিল এটা এবার হবে ১৪ থেকে সাড়ে ১৬ শতাংশ।
আমরা আবাসন ব্যবসায়ীরা রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর মাধ্যমে এই ট্যাক্স সাড়ে শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যম এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলাম। একটা সময় ১৫ শতাংশ ট্যাক্স ছিল তখন জমি–ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক হ্রাস পেয়েছিল। চার বছর আগে কিছুটা হ্রাস করার পর এই ট্যাক্স ছিল ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন করে চার শতাংশ ট্যাক্স বৃদ্ধিতে এই খাতে স্থবিরতা নেমে আসবে। অধিক ট্যাক্স কালেকশন করতে গিয়ে উল্টো ট্যাক্স কমবে বলে আমাদের শংকা। নীতি সহায়তার অভাবে ক্রমে দেশের আবাসন খাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পতিত হয়েছে। অতিরিক্ত কর আরোপের কারণে অনেকেই আবার দেশের বাইরে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করবেন।
রিহ্যাব জাতীয় বাজেট উপলক্ষে আবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনো প্রতিফলন হয়নি। অপ্রদর্শিত অর্থের বিনিয়োগ, ফ্ল্যাটের সেকেন্ডারি বাজার ব্যবস্থা চাঙা করতে পুরাতন ফ্ল্যাটে নিবন্ধন ব্যয় কমানো, বিশেষ তহবিল গঠনসহ কোনো দাবির প্রতিফলন হয়নি।
এই অবস্থায় আশু পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই সংকট উত্তরণ অসম্ভব। এই মুহূর্তে নতুন করে নানা পণ্যের কর বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমাদের শঙ্কা। আবাসন খাত মানে শুধু আবাসন খাত নয়। এর সঙ্গে চার শতাধিক লিংকেজ শিল্প জড়িত এবং যা জিডিপির অন্যতম সূচক। আবাসন খাতে সংকট মানে এই সব উপ খাতে সংকট। আবাসন খাতে ৪০ লাখ নাগরিকের কর্মস্থান। এই খাতের সংকট অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করবে আমার শঙ্কা। কাজেই বাজেট পাশের আগে এই দিকে অবশ্যই সুনজর দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
লেখক : ম্যানেজিং ডিরেক্টর, জেসিএক্স ডেভেলোপমেন্টস লিমিটেড এবং ডিরেক্টর, এফবিসিসিআই।
আজকালের খবর/আরইউ