বুধবার ৪ অক্টোবর ২০২৩
সরকারি পাটবীজ নষ্ট হচ্ছে কৃষকের বাড়িতে ও ইউপি’র গুদামে
মনির মোল্যা, সালথা
প্রকাশ: রবিবার, ৪ জুন, ২০২৩, ৫:৫৭ PM
অর্থকরী ফসল পাটের উৎপাদন বাড়াতে প্রতিবছর চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ ও সার বরাদ্দ দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু এবার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) থেকে বিনামূল্যে যেই পাটের বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা চাষ করতে আগ্রহী নন পাট উৎপাদনে বিখ্যাত ফরিদপুরের সালথা-নগরকান্দার কৃষকরা। যে কারণে গতবার কিছু কৃষক প্রণোদনার বীজ চাষ করলেও এবার বেশিরভাগ কৃষক বীজ গ্রহণ করেনি। আবার যারা বীজ সংগ্রহ করেছে, তাদের অধিকাংশই জমিতে বপন না করে ঘরে রেখে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে বস্তাভর্তি সরকারি এসব পাটের নষ্ট হতে দেখা গেছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা বিফলে যাচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে। এদিকে এবার এখন পর্যন্ত প্রণোদনার সারও পায়নি উভয় উপজেলার কৃষকরা। কৃষকদের দাবি, সরকার যেসব দেশীয় লাল পাটের বীজ দিচ্ছে তা আমাদের জমিতে টেকসই না। ফলনও তেমন ভালো হয় না। সরকার যদি ভারতীয় জিআরও-৫২৪ জাতের সবুজ পাটের বীজ বরাদ্দ দেয়, তাহলে দরিদ্র কৃষকরা উপকৃত হবে।

সংশ্লিষ্ট পাট উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারো সালথায় তিন হাজার ও নগরকান্দায় তিন হাজার কৃষকের জন্য মোট ছয় হাজার কেজি পাটের বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার মূল্য ১২ লাখ টাকা। একই সঙ্গে প্রত্যেক কৃষককে ১২ কেজি করে সার দেওয়ার কথা। গত মার্চ মাসের ১৫ তারিখে এসব পাটের বীজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ দেখানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরাদ্দ পাওয়া ছয় হাজার কৃষকের মধ্যে সর্বোচ্চ এক হাজার কৃষক সরকারি পাটের বীজ বপন করেছেন। তবে সার এখনো বিতরণ করা হয়নি।

সম্প্রতি সালথার আটঘর ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের গোডাউনে ৪০০ কেজি (আট বস্তা) পাটের বীজ পড়ে রয়েছে। বেশিরভাগ বীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গোডাউনে সরকারি পাটের বীজ পড়ে থাকার বিষয় চেয়ারম্যান শহিদুল হাসান খান সোহাগ বলেন, এসব বীজ কোনো কৃষক নিতে চান না। কৃষকের অভিযোগ, এসব বীজের পাট ভালো হয় না। তাই তারা এসব বীজ নিতে আগ্রহী নন। এখন আমরা কী করবো?, কৃষকরা যদি বীজ না নেন, তাহলে জোর করে তো দেওয়া যাবে না। সোনাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. খায়রুজ্জামান বাবু বলেন, এবার প্রণোদনার পাটের বীজ বিতরণ নিয়ে চরম বিপাকে পড়লেও আমার ইউনিয়নের বরাদ্দকৃত সব বীজই বিতরণ করা হয়েছে। তবে কৃষকরা এসব বীজ নিয়ে ঘরে রেখে দিয়েছেন বলে শুনেছি। আর এবার এখনো প্রণোদনার সার আসেনি।

গট্টি ইউনিয়নের কৃষক হাফেজ মোল্যা বলেন, সরকারি বীজ যখন বিতরণ করা হয়, তখন বেশিরভাগ কৃষক জমিতে কিনা পাটের বীজ বপন করে ফেলে। সরকারি বীজ দেয় মার্চ মাসে আর আমরা বীজ বপন করি ফেব্রুয়ারি মাসে। আগেভাগে বীজ বপন না করলে বর্ষা সময় সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া সরকারি বীজ চাষ করে দেখেছি, আঁশ ভালো হয় না। পাটকাঠিও নরম হয়। জানামতে এবার আমাদের এলাকায় কেউ প্রণোদনার বীজ বপন করেনি। কৃষকরা সরকারি বীজ সংগ্রহ করলেও সবাই তা ঘরে রেখে দিয়েছে। আমার ঘরেও এক প্যাকেট রয়েছে। এবার সবাই ভারতীয় জিআরও-৫২৪ জাতের পাটের বীজ কিনে চাষ করছেন। সরকার যদি ভারতীয় পাটের বীজ দেয়, তাহলে আমাদের নিতে সমস্যা নেই।

গোয়ালপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সাত্তার শেখ বলেন, গত বছর সরকারি দেশীয় লাল পাটের বীজ বপন করেছিলাম। কিন্তু পাটের ফলন তেমন ভালো হয়নি। গাছও নরম হয়। জাগ দেওয়ার পর নরম গাছগুলো ভেঙে যায়। তাই এবার আর সরকারি পাটের বীজ নেইনি। সরকার যদি ভারতীয় সবুজ পাটের বীজ দেয়, তাহলে আগামীবার থেকে নেবো।

সালথা উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল বারী বলেন, সালথায় তিন হাজার কেজি পাটের বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু আটঘর ইউনিয়নে ৪০০ কেজি পাটের রয়ে গেছে। এসব বীজ ফেরত দেওয়া হবে। অনেকেই এসব বীজ দিয়ে পাটচাষ করছেন। তবে শুনেছি অনেকে ঘরেও রেখে দিয়েছে। এখন কৃষকরা যদি আমাদের কাছ থেকে বীজ নিয়ে ঘরে রেখে দেয়, তাহলে আমরা কী কবরো। তবে বীজ পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছি। আর সার এখনো এসে পৌঁছায়নি।

নগরকান্দা উপজেলা উপসহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরকান্দায় তিন হাজার কৃষককে পাটের বীজ দেওয়া হয়েছে। অনেকে এই বীজ ঘরে রেখে দিছে বলে শুনেছি। আমরা সেসব পাটের বীজ দেই, এগুলো যদি বপণের ১২০ দিন পর পাটের গাছ কাটে, তাহলে ভারতীয় বীজের চেয়ে আমাদের দেশীয় বীজের পাট ভালো হয়। কিন্তু আমাদের এলাকার চাষিরা ১০০ দিনের মধ্যে পাট কেটে ফেলে, যে কারণে পাটের আঁশ খারাপ হয় ও গাছ নরম হয়। তবে কৃষকের অভিযোগের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আর সার এখনো আসেনি।

ফরিদপুর জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা তারেক লুতফর আমিন বলেন, এবার সালথা ও নগরকান্দায় ছয় হাজার কৃষককে সরকারি পাটের বীজ বিতরণ করার পরপরই কৃষি অফিস থেকেও প্রায় পাঁচ হাজার কৃষককে পাটের বীজ দেওয়া হয়। যে কারণে অনেকে আমাদের বীজটা বপন করেনি। তবে কয়েকদিন আগে সালথায় ৭৫ জন পাটচাষিকে প্রশক্ষিণ দেওয়া হয়। সেখানে চাষিদের কাছে বীজ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। তখন তারা কেউ অভিযোগ করেনি। সরকারি পাটের বীজের জীবনকাল হচ্ছে ১২০ দিন। কিন্তু চাষিরা আগেরভাগে পাট কেটে ফেলানোর কারণে ফলন খারাপ হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, সরকারি বীজটা দেশের কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে। পরে সেই বীজ শুকিয়ে প্যাকেটজাত করতে মার্চ মাসের ৮-১০ পার হয়ে যায়। যে কারণে বীজটা বিতরণ করতে দেরি হয়। আগামীতে আগেরভাগে বীজ দেওয়া চেষ্টা করবো। আর সারও বরাদ্দ আসছে। হয়তো সপ্তাহখানেকের মধ্যে কৃষকের মধ্যে সার পৌছায় দেওয়া হবে।

আজকালের খবর/ওআর








সর্বশেষ সংবাদ
পোলিং এজেন্টদের ভূমিকা যথাযথ হলে কারচুপি পরাভূত করা সম্ভব: সিইসি
পুলিশ হেফাজতে সাবেক দুদক কর্মকর্তার মৃত্যুর অভিযোগ
সূচকের মিশ্র প্রবণতায় শেয়ারবাজারে লেনদেন চলছে
নাইজেরিয়ায় অবৈধ তেল শোধনাগারে বিস্ফোরণে নিহত ৩৭
সিকিমে হঠাৎ বন্যায় নিখোঁজ ২৩ সেনা সদস্য
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কবি নজরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত
‘আমেরিকার সঙ্গে আওয়ামী লীগের আপস হয়ে গেছে, আর স্যাংশন আসবে না’
শর্ত মেনেই শুটিংয়ে রাজি সায়ন্তিকা!
সেলিব্রেটিদের মারামারির ভিডিও প্রকাশ করলেন রাজ রিপা
মুক্তিপণ না পেয়ে শিশুকে হত্যা, মরদেহ মিললো ডোবায়
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft