অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় ইতিহাসের জন্ম দিলো চেন্নাই সুপার কিংস। গুজরাটের দেয়া পাহাড় সমান রানের টার্গেট তারা পেরিয়ে গেলো দলীয় একাগ্রতায়। দশমবারের মত ফাইনাল খেলতে নামা দলটি বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে গুজরাটকে হারিয়ে পঞ্চমবারের মত জয় করলো ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজিক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের আসর। এদিন বৃষ্টির কারণে বন্ধ থাকা খেলায় ৫ ওভার কমিয়ে দিয়ে ১৭১ রানের লক্ষ্য দাড়ায় ইয়লো আর্মিদের। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে জাদ্দুর ফিনিংসে ৫ উইকেটের জয় পায় ধোনির দল, আর রচিত হলো শ্রেষ্ঠত্বের উপাখ্যান, রঙিন হলো ক্যাপ্টেন কুলের সম্ভাব্য বিদায়।
গুজরাটের দেওয়া ২১৫ রানের লক্ষ্য ব্যাট করতে নামলে বৃষ্টিতে পন্ড হয়ে যায় খেলা। বৃষ্টি আইনে ম্যাচ গড়ায় ১৫ ওভারে ১৭১ রানের লক্ষ্য। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে চেন্নাইয়ের হয়ে উড়ন্ত সূচনা করেন দলটির দুই ওপেনার রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও ডেভন কনওয়ে। অবিরাম চার ছয়ে পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৭২ রান। কিন্তু সপ্তম ওভারে রশিদ খানের বলে ক্যাচ তুলে দিলে ভাঙে এ জুটি, সাজঘরে ফিরে যান রুতুরাজ।
একই ওভারে কনওয়ের উইকেটও তুলে নেন রশিদ খান। দুই বলের ব্যবধানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় চেন্নাই। দলের হয়ে তখন জয়ের লক্ষ্যে হাল ধরেন শিবম দুবে ও অজিঙ্কা রাহানে। এ দুজনের ধারাবাহিক ব্যাটিং ৩৯ রানের জুটি পায় চেন্নাই।
কিন্তু দশ ওভার শেষ না হতেই আগের ম্যাচে গুজরাটের নায়ক মোহিত শর্মার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হন রাহানে। দুই চার দুই ছয়ে ১৩ বলে ২৭ রানের ঝড়ো এক ইনিং খেলেন তিনি। ১১ ওভার পর চেন্নাইয়ের রান তখন ১১৮, প্রয়োজন ২৪ বলে ৫৪ রান। এমন সময় ক্রিজে আসেন আম্বাতি রাইডু। দুবে-রাইডু জুটিতে চেন্নাইয়ের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় আরও ৩২ রান।
কিন্তু দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আবারও উইকেট হারায় তারা। ৮ বলে ১৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান রাইডু, ক্রিজে আসেন ক্যাপ্টেন কুল ধোনি। কিন্তু তিনিও এদিন দলের হাল ধরতে পারেননি,মহিতের বলে ক্যাচ তুলে দিলে মিলারের তালুবন্দি হয়ে শূণ্য রানেই ফিরে যান তিনি। চেন্নাইয়ের তখন প্রয়োজন ১২ বলে ২২ রান। ক্রিজে তখন জাদেজা এবং দুবে চেন্নাইয়ের হয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
পরের ওভারে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ৮ রান এলে সমীকরণ দাঁড়ায় জয়ের জন্য ৬ বলে প্রয়োজন ১৪। শেষ ওভারে মোহিত শর্মার প্রথম তিন বলে আসে ৩ রান। শেষ ৩ বলে প্রয়োজন আরও ১১। এ সময় ছয় মেরে খেলা নিয়িন্ত্রণে নেন জাদেজা,শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন চার রান। এবং শেষ বলে চার মেরে ইতিহাসের জন্ম দেন রবীন্দ্র জাদেজা। অবিশ্বাস্য দৃঢ়তায় চেন্নাইকে পৌছে দেন জয়ের বন্দরে। আর এ জয়ে আইপিএলে নিজেদের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ করলো চেন্নাই। দশমবার আইপিএল খেলতে নামা দলটি জয় করলো তাদের পঞ্চম শিরোপা।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে গুজরাটের হয়ে ওপেনিংয়ে আসে শুভমন গিল ও ঋদ্ধিমান সাহা। ফাইনালের আসর দেখে শুনেই শুরু করে এই দুই ওপেনার। উদ্বোধনী জুটিতেই দলীয় অর্ধশত রান পার করে পাওয়ার প্ল'তে। তবে দলীয় ৬৭ রানে এ জুটি ভাঙেন জাদেজা।
sportsচলতি মৌসুমে ফাইনাল ম্যাচে নামার আগে গুজরাটের হয়ে ১৬ ম্যাচ খেলে ৮৫১ রান করেছেন গিল যা এক মৌসুমে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় তৃতীয়। আর এ তালিকায়ই প্রথম অবস্থানে আছেন কোহলি। ২০১৬ সালে ৪ সেঞ্চুরি ও ৭ ফিফটিতে ১৬ ম্যাচে তিনি করেছিলেন ৯৭৩ রান, যে চূড়ায় আজও ওঠতে পারেনি কেউ। আর ফাইনালের মঞ্চে কোহলির রেকর্ড ভাঙতে দরকার ছিল ১২২ রান। তবে সপ্তম ওভারের শেষ বলে ধোনির কাছে স্টাম্পিং হয়ে ফেরার আগে ৭ চারে ২০ বলে ৩৯ করেন গিল। এতেই কোহলির রেকর্ড ভাঙা থেকে বঞ্চিত হলেন এই ব্যাটার।
গিলের পর দ্বিতীয় উইকেটে আসেন সাই সুদর্শন। তাকে নিয়ে রানের চাকা সচল রাখেন আরেক ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা। এ জুটি মিলে ৪২ বলে গড়েন ৬৪ রান। তবে দলীয় ১৩১ রানে দীপক চাহারে বলে ধোনি কাছে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে পথ ধরেন ঋদ্ধিমান। ৩৯ বলে ৫৪ করেন এই ব্যাটার। এরপর তৃতীয় উইকেটে হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে চেন্নাই বলারদের উপর তান্ডব চালাতে থাকেন সুদর্শন। ৩৩ বলে নিজের অর্ধশতক পুরোন করেন সাই। নিজের পঞ্চাশ পের হতেই সিএসকে বোলারদের ওপর আরও চড়া হতে থাকেন সুদর্শন, ১৭তম ওভার করতে আসা তুষার দেশপন্ডের ওভারে নেন ১৯ রান।
তবে দলীয় ২১২ রানে মাথিসা পথিরানা বলে ৪৭ বলে ৯৭ করে আউট হলে ভাঙে হার্দিক-সুদর্শনের ৩৩ বলে ৮১ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান সংগ্রহ করে গুজরাট। চেন্নাইয়ের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন মাথিসা পথিরানা। অপরদিকে ১টি করে উইকেট নেন রবীন্দ্র জাদেজা ও দীপক চাহার।