
সাধারণত জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম। ওই সময়টিতে বর্ষাকাল শুরু। তখন বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। আর এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই পুরো সময়টিকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নেওয়া হয়।
সেই হিসাবে এডিস মশার প্রজনন এখনো শুরু হয়নি। এর আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৮০ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
শনিবার (২৭ মে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন ৮০ জন ডেঙ্গুরোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন ভর্তি রোগীর ৭৩ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং সাতজন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বর্তমানে দেশে মোট ২০২ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ১৭৭ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ২৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৭ মে পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মোট এক হাজার ৭০৪ জন ডেঙ্গুরোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকায় এক হাজার ১১৯ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ৫৮৫ জন রয়েছেন।
একই সময়ে দেশে মোট ছাড়প্রাপ্ত ডেঙ্গুরোগী এক হাজার ৪৮৯ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ছাড়প্রাপ্ত রোগী ৯৩৩ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ৫৫৬ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি এবং এবছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ২৮১ জন মারা যান।
পরিবেশবিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের পরিবেশ-পরিস্থিতি বদলে গেছে। নগরায়ন ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামেও। তাই এখন ডেঙ্গুর কাল বদলে যাচ্ছে। মৌসুম শুরু আগে আক্রান্তের হারই তার প্রমাণ। তার জন্য এখন রাজধানী ও বিভাগীয় শহর ছাড়াও ডেঙ্গু নির্মুলের কার্যক্রম গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদেরা বলছেন, এখন এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি রয়েছে। রাস্তা উঁচু করার ফলে নিচু হয়ে যাওয়া বাসাবাড়ির জমা পানিতেও এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, নানা কারণে সারা বছরই এখন পানি জমে থাকছে। মে মাসে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এডিসের আরো বেশি প্রজননক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। নগরবাসীকে সিটি করপোরেশনের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। করপোরেশনের উচিত আক্রান্ত রোগীর এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া।
চট্টগ্রামে এক বছরের ব্যবধানে ডেঙ্গু বেড়েছে ১০ গুণ : চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সকাল ৮টার আগ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরো সাতজন হাসপাতালে ভর্তি হন।
শুধু তাই নয়, দেড় মাস ধরে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে—এই পাঁচ মাস ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭। আর এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২৫ মে পর্যন্ত চার মাস ২৫ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৬৭ জন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ। গত জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক শিশুসহ তিনজন মারা গেছে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাউছ গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণত বর্ষার আগে ও বর্ষার পরে ডেঙ্গু রোগী বাড়ে। কিন্তু গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার বছরের এই সময়ে ডেঙ্গু রোগী অনেক বেড়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানান, জেলায় গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত পাঁচ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের। ২০২১ সালে আক্রান্ত ২৭১ জনের মধ্যে মারা গিয়েছিল পাঁচজন। ২০২০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১৭ জনের। ওই বছর মৃত্যুর কোনো খবর নেই।
আজকালের খবর/আরইউ