
বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচরপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ইদানীং সবার মধ্যে কেমন যেন একটা অসহনশীলতা দেখা যাচ্ছে। এ অসহিষ্ণুতা বিচার বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাষ্ট্রের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা হলে আমরা আইনের শাসনের জন্য যে সংগ্রাম করছি তা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো না।
আজ রবিবার ফরিদপুর আইনজীবী সমিতি ভবনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ভাবতে হবে, আপনারা আদালতের অংশ। আপনাদের সাহায্য ছাড়া আদালত ঠিকমত সচল রাখা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমরা আইনজীবী ও বিচারকরা মিলে একসঙ্গে চেষ্টা করতে চাই মামলার জট যেন কমে যায়। আমি মনে করি, জুডিশিয়ারিতে বিচারক ডান হাত হলে আইনজীবীরা বাম হাত। এক হাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে কাজ ঠিকমত হবে না।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এ দেশের মানুষ এক সময় জবের ছাতু, কচু ঘেছু খেত। দেশের স্বাধীনতা আমদের অনেক এগিয়ে নিয়েছে। আমরা আর আগের জায়গায় নেই। অনেক সড়ক নির্মিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি আশাবাদী মানুষ, আমিও আশাবাদী। সকল ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের তিনটি স্তম্ভ- বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ। এর কোনো একটা বিভাগ দুর্বল হলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গণতন্ত্র দুর্বল হয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় না। তাই আসুন, আমরা সকলে সম্মেলিত চেষ্টায় বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যাই।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ব্যাপারীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে জেলা ও জায়রা জজ আকবর আলী শেখসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারক এবং আইনজীবী সমিতির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধান বিচারপতি ফরিদপুরে জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে বিচারপ্রার্থীদের জন্য একটি বিশ্রামাগার স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
ওই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশে ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলায় কমপক্ষে ৪ কোটি লোক জড়িত।
তিনি বলেন, আমরা বলি জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। যারা বিচার চাইতে আসেন তারা এ দেশের মালিক। তাদের কথা চিন্তা করে বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে পানি পান ও টয়লেটের সুবিধা থাকবে। বিচার চাইতে এসে যেন কাউকে এলোমোলো ঘোরাফেরা করে দুর্ভোগে পড়তে না হয়।
প্রতিটি জেলায় বিশ্রামাগার নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কাজ যাতে ঠিকমত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঠিকাদাররা যেন চুরি না করে।
ফরিদপুরে মামলার নিস্পত্তির হার বেশি হওয়ায় বিচারক ও আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এখানে গত এক বছরে ২৫ হাজার ৫৫৭ মামলা হয়েছে। এ সময় ৩০ হাজারের বেশি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির হার ১১৪%। এ ঘটনা আমাদের আশা জাগায়।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতি ঢাকা থেকে সড়ক পথে ফরিদপুর এসে পৌঁছান। পরে সার্কিট হাউজে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
আজকালের খবর/ওআর