রবিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মিয়ানমারে ফিরে যাক রোহিঙ্গারা
আর কে চৌধুরী
প্রকাশ: শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২, ২:৪৬ পিএম
মিয়ানমার সীমান্ত দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশী এই দেশটির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে শাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধের মুখে পড়েছে। সে যুদ্ধের উত্তাপ বাংলাদেশ সীমান্তেও প্রায়শ অনুভূত হচ্ছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও প্রতিবেশী দেশের সরকারি ও বিদ্রোহী বাহিনীর পরস্পরকে লক্ষ্য করে ছোড়া গোলাগুলি এসে পড়ছে। এমনকি হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। কয়েকদিন কিছুটা বিরতির পর সীমান্তে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সঙ্গে সরকারি বাহিনীর গোলাগুলি আবারো শুরু হওয়ায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। 

গত শনিবার দুপুর একটার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ইউনিয়নের লেমুছড়ি বাহিরমাঠ এলাকায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে পড়ে। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ওই এলাকার বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কোনো গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। এতে অনেকটা স্বস্তিতে ছিলেন সীমান্তবর্তী এলাকার বাংলাদেশিরা। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হয় মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি নাইক্ষ্যংছড়ির লেমুছড়ি এলাকায় পড়ার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। সদর ইউনিয়নের ভাল্লুক খাইয়া ও দোছড়ি ইউনিয়নের বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে শনিবার থেকে। মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা বইছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির এই দেশের জন্য বিপুলসংখ্যক মানুষের বাড়তি বোঝা ভয়াবহ সমস্যার সৃষ্টি করেছে। নতুনভাবে সে দেশে সংঘাত শুরু হওয়ায় রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতির অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় হতে হবে। বাংলাদেশের ঘাড় থেকে রোহিঙ্গা বোঝা নামাতে তারা তাদের করণীয় কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসবে এমনটিই প্রত্যাশিত।

মিয়ানমার থেকে জাতিগত নিধন ও দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বাস্তুত প্রায় ১২ লাখ নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। প্রাথমিকভাবে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আশ্রয় দেওয়া হলেও, ক্রমেই এই জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ- অর্থনীতি ও আইনশৃংখলার জন্য হুমকি ও বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুনের শিকারও হয়েছেন বেশ কয়েকজন। রোহিঙ্গা নেতাসহ কয়েকজন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে এক ভলান্টিয়ারকে হত্যা করেছে একদল দুষ্কৃতকারী। উখিয়ার পালংখালী ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই খুনের ঘটনা ঘটে।

মাদক ব্যবসা, অস্ত্র পাচার, মানব পাচার এবং সহিংসতার মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, যা এখন ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, এগুলো বন্ধ করা আমাদের আইনশৃংখলা বাহিনীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে মিয়ানমারে নৃশংস সামরিক দমন-পীড়নের কারণে পালিয়ে আসা ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ একটি বড় আঞ্চলিক সংকট এড়াতে সাহায্য করেছে। এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে খাদ্য ও আশ্রয় দেওয়া সরকারের পক্ষে সহজ কাজ ছিল না। তবু আমরা উদারভাবে আমাদের সীমান্ত খুলে দিয়েছি।  

প্রত্যাবাসন না হওয়ায় নিরাপত্তা হুমকি বাড়ছে। এতে মানবিক সংকটও বাড়ছে। আর নিরাপত্তা হুমকি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বজুড়ে সংকট তৈরি হবে। এটি আশার খবর যে, বাংলাদেশের এ সঙ্কট মোকাবেলায় করণীয় নিয়ে আলোচনা করতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। তবে গত ছয় বছরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে কোন কার্যকরী উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে। জাতিসংঘ কেন ব্যর্থ হলো সেই দিকগুলো খুঁজে বের করে প্রতিষ্ঠানটিকে আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধ্য করতে না পারলে বিশ্বব্যাপী উগ্রবাদ বাড়বে, যা কারোরই কাম্য নয়।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারের হাতেই। মিয়ানমার অব্যাহতভাবে তার অঙ্গীকার অমান্য করলেও আজ পর্যন্ত এ সঙ্কট নিরসনে তেমন কোনো অগ্রগতিই হয়নি, যা দুঃখজনক। এজন্য মিয়ানমারের মানবতাবিরোধী ঔদ্ধত্যের অবসান ঘটিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে জাতিসংঘসহ বিশ্বনেতাদের কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শিগগির তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা এর প্রশংসা করি। বিশেষ করে এই অঞ্চল ও এর বাইরে যেকোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা জরুরি।

আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, সদস্য এফবিসিসিআই,  মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
নান্দাইল পৌর সদরে এক রাতে তিন বাসায় চুরি
শিক্ষাবিদ নূরুল ইসলাম ভাওয়ালরত্নের ইন্তেকাল
নতুন বছরে জঙ্গি মোকাবিলায় প্রস্তুত র‌্যাব: ডিজি
বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন মারা গেছেন
২০২৩ হোক অগ্রযাত্রার আরেকটি বছর: সজীব ওয়াজেদ জয়
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কাজী নজরুল ইসলাম ও বাংলা গান
এভাবে চলে যেতে নেই
পরীমনির জীবনটা আমার জীবনের মতো: তসলিমা
কেউ আক্রমণ করলে ছাড় দেবো না: কাদের
২০২৩ হোক অগ্রযাত্রার আরেকটি বছর: সজীব ওয়াজেদ জয়
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft