সোমবার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
১৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে জিম্মি লিবিয়া শ্রমবাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২, ৫:০১ পিএম
দীর্ঘ ১০ বছর পর বাংলাদেশিদের জন্য লিবিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও ১৫ রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে লিবিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে লিবিয়ায় বা্ংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়। কিন্তু ওই সিন্ডিকেটের প্রভাবের কারণে ঢাকার লিবিয়ান দূতাবাস সিন্ডিকেটের মাধ্যম ছাড়া পাসপোর্ট জমা ও ভিসা স্ট্যাম্পিং এ গড়িমসি করছে। যদিও এ ব্যপারে বায়রার হস্তক্ষেপে গত রবিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে সিন্ডিকেটের বাইরে পাসপোর্ট গ্রহণ ও ভিসা ডেলিভারী দেওয়া শুরু করেছে। তবে এরই মধ্যে ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যে সকল পাসপোর্ট জমা হয়েছে ভিসা স্ট্যাম্পিং এর পরে সেই সকল পাসপোর্ট ফেরত দিতে অনৈতিকভাবে পাসপোর্ট প্রতি অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছে।
 
সোহেল আহসান খান একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য সিন্ডিকেটের একজন প্রভাবশালী সদস্য মেসার্স সোনার বাংলা কৃষি খামার রিক্রুটিং এজেন্সির ম্যানেজিং পার্টনার এমডি কেফায়েতুল্লাহ মামুনের কাছে ১২টি পাসপোর্ট জমা দেন। শুরুতে স্ট্যাম্পিং বাবদ একশত ৫০ ডলার দেয়ার কথা থাকলেও স্ট্যাম্পিং শেষে পাসপোর্ট আটকে রেখে অতিরিক্ত ১ হাজার পাঁচশত ডলার দাবি করেন কেফায়েতুল্লাহ। এরপর থেকে শুরু হয় রায় জটিলতা। ভুক্তোভোগীদের অভিযোগ, এ সিন্ডিকেট পাসপোর্ট আটকে রেখে অনৈতিক টাকা দাবি করছে, ফলে লিবিয়াগামী শ্রমিকরা পড়েছে ভয়ানক বেকায়দায়। 

এদিকে কয়েকজন ভুক্তেভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ আগামী ৯ নভেম্বরে, ২০২২ এ শেষ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায়, অতি দ্রুত ভিসাসহ পাসপোর্ট ফেরত না পেলে তাদের লিবিয়া যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে সোনার বাংলা কৃষি খামার রিক্রুটিং এজেন্সির ম্যানেজিং পার্টনার এমডি কেফায়েতুল্লাহ মামুনের সঙ্গে ফোনে এবং বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো ধরনের উত্তর পাওয়া যায়নি। 
 
এ ব্যাপারে জনশক্তি রপ্তানিকারীদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) এর সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার জানান, বাংলাদেশের বৈদেশিক মূদ্রা উপার্জনের শতকরা ৫৫ ভাগ আসে প্রবাসীদের পাঠানো রেমি্টেন্স থেকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং তার অধীনস্ত দপ্তরসমূহ সহ কেউ এর উন্নয়নে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনা বা এই সেক্টরকে তেমন গুরুত্ব দেয়না। তারপরও আবার একটি চক্র আছে, যারা দেশের জনশক্তি রপ্তানি সেক্টরটিকে ধংস করার জন্য তৎপর রয়েছে। এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নেয়া অতি জরুরি বলে তিনি মনে করেন। দির্ঘদিন পরে লিবিয়ায় বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হলেও ১৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের কারণে লিবিয়ায় পূণরায় জনশক্তি রপ্তানিতে হুমকি হয়ে পড়েছে।
 
এ প্রসঙ্গে বায়রা সভাপতি আরও বলেন, তাদের পক্ষ থেকে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বৈদেশিক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে বায়ারার পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে ঢাকাস্থ লিবিয়া দূতাবাসে ও বায়রার পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়। এর পরিপ্রক্ষিতে গত রবিবার (২৪ অক্টোবর) প্রথম সিন্ডিকেটবিহীন ভিসা স্ট্যাম্পিংসহ পাসপোর্ট বিতরণ শুরু করেছে ঢাকার লিবিয়ান দুতাবাস।
 
তিনি বলেন, জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নয় বরং সিন্ডিকেটমুক্ত পরিবেশ চাই। তিনি আরও বলেন, খুব শীঘ্রই লিবিয়া থেকে ডেলিগেশন টিম বাংলাদেশে আসবে। তারা শুধুমাত্র সিন্ডিকেটই নয়, স্বল্প খরচে লিবিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়া সহ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণে তারা দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোপ আলোচনা করবেন।
 
আবুল বাশার বলেন, সিন্ডিকেটমুক্ত হলে খুবই কম খরচে বাংলাদেশের শ্রমিকরা লিবিয়া যেতে পারবে। সোনার বাংলা কৃষি খামার রিক্রুটিং এজেন্সির ম্যানেজিং পার্টনার এমডি কেফায়েতুল্লাহ মামুন ১২টি পাসপোর্ট আটকে রেখে অতিরিক্ত অনৈতিকভাবে প্রতিটি পাসপোর্টের জন্য ১৫০০ ডলার দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেফায়েতুল্লাহ জনশক্তি রপ্তানিতে মারাত্বক ক্ষতি করে আসছে। সে এই সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করে আসছে।
 
লিবিয়া উত্তর আফ্রিকার সমৃদ্ধশালী একটি মুসলিম রাষ্ট্র। সেদেশে বাংলাদেশি দক্ষ-অদক্ষ কর্মীর অভিবাসন হওয়ায় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়ে আসছে। সেখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় অভিবাসন ব্যয় কম, কিন্তু মাসিক বেতন-ভাতা বেশি। লিবিয়ায় ভারত,পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা বেশি। কারণ, বাংলাদেশিদের সে দেশের আইন-শৃঙ্খলা মান্য করা ও আচরণগত সুনাম রয়েছে।
 
লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনকালের শেষ সময়ে ও পরবর্তী বছরসমূহে সে দেশে অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও স্থানীয় মিলিশিয়া কর্তৃক আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্মী প্রেরণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ লিবিয়ার বিবাদমান গোষ্ঠীর আন্তকলহ দূর করার উদ্যোগ নিয়ে গঠিত নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেয়। ২০২০ সালে এটি বাস্তবে রূপ নেয় এবং ২০২১ সালে জিএনইউ সরকার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা লাভ করে। লিবিয়ার বর্তমান সরকার দেশ গঠনে মনোযোগী হয়ে বৈদেশিক জনশক্তি আনায়নের উদ্যোগ নেয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রে 
লিবিয়া সরকার অসাধারন উদারতায় Visa Approval প্রদান করছে। এর ধারাবাহিকতায় সে দেশের Labour Ministry and Immigration Department যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

আজকালের খবর/ইমু








সর্বশেষ সংবাদ
নান্দাইল পৌর সদরে এক রাতে তিন বাসায় চুরি
শিক্ষাবিদ নূরুল ইসলাম ভাওয়ালরত্নের ইন্তেকাল
নতুন বছরে জঙ্গি মোকাবিলায় প্রস্তুত র‌্যাব: ডিজি
বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন মারা গেছেন
২০২৩ হোক অগ্রযাত্রার আরেকটি বছর: সজীব ওয়াজেদ জয়
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কাজী নজরুল ইসলাম ও বাংলা গান
এভাবে চলে যেতে নেই
পরীমনির জীবনটা আমার জীবনের মতো: তসলিমা
কেউ আক্রমণ করলে ছাড় দেবো না: কাদের
২০২৩ হোক অগ্রযাত্রার আরেকটি বছর: সজীব ওয়াজেদ জয়
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft