প্রকাশ: বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২, ৮:০৫ PM
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনেট অধিবেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘লুটতরাজকারী’ ও ‘নারী নিপীড়নকারী’ বলে মন্তব্যকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে নিন্দা ও তার শাস্তির দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে।
‘মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রজন্ম’ সংগঠনের জাবি শাখার দপ্তর সম্পাদক জাহিদ হাসান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের বয়স সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় সুবিধা বাতিল করা নিয়ে সিনেট অধিবেশনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে প্রকাশ্যে অবমাননা করার মাধ্যমে অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন যা অতি ঘৃণিত অপরাধ। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন অশালীন মন্তব্য ও কটূক্তি করার অপরাধে অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার কে অতিদ্রুত ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যথায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান ও প্রজন্মদের সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের সংগঠন ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর সভাপতি আব্দুল জব্বার হাওলাদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সিনেট অধিবেশনে অধিকাংশ সিনেট সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক অধ্যাপক ড. আমির হোসেনের অবসরের বয়স ৬৬ বছর রাখার পক্ষে মত দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. অজিত কুমার মজুমদার ঢালাওভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘লুটতরাজকারী’ ও ‘নারী নিপীড়নকারী’ বলে আখ্যায়িত করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যাক্কারজনক ভাবে অসম্মানিত করায় আমরা ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ। তার এই ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানিত করায় আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর অপসারণ ও রাষ্ট্রীয় আইনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা হরণে সিনেটে এমন এজেন্ডা এনে বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য কাজ করেছেন। অধ্যাপক অজিত বক্তব্য দানকালে তিনি নীরব থেকে এধরনের বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানে উৎসাহিত করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমূল্যায়ন করেছেন।
এছাড়া সম্মিলিত শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২৪ জুন ৩৯ তম বার্ষিক সিনেট সভায় মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকগণের অবসরের বয়স এক বছর বাড়ানোর বিরোধিতা করে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন ড. অজিত কুমার মজুমদার মুক্তিযোদ্ধাদের লুটতরাজকারী ও নারী নিপীড়নকারী বলে মন্তব্য করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অধিবেশনে বেশিরভাগ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের এই রাষ্ট্রীয় সুবিধা রাখার পক্ষে মত দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অধ্যাপক অজিত এই অশালীন মন্তব্য করে অধ্যাপক আমির হোসেন সহ দেশের সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করেন। এই ধৃষ্টতামূলক বক্তব্যের মাধ্যমে অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো প্রকার একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অবসর গ্রহণের বয়স ৬৫ বছর নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সিনেট সভার আলোচ্যসূচিতে উল্লেখ করা হয়। এসময় আলোচ্যসূচি নিয়ে মতামত দিতে গিয়ে অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন।
আজকালের খবর/বিএস