প্রতিটি মানুষের মন-মনন এবং চিন্তার পরিধি পরিমাপ করা হয় কর্মের মাধ্যমে। অদম্য ইচ্ছাশক্তি, চিন্তা-চেতনা, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি, উদারতা এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রথম মেয়র মো. আব্দুস শুকুর। সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা বলেছেন আজকালের খবর’র মফস্বল সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সবুজ।
দীর্ঘদিনের অনুন্নত পৌরসভাকে নান্দনিক রূপ দেওয়ার প্রত্যয়ে নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন প্রগতিশীল, আধুনিক ও কর্মঠ পৌরপিতা মো. আব্দুস শুকুর। টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করে আধুনিক, সুন্দর পরিচ্ছন্ন, বাসযোগ্য ও নান্দনিক পৌরসভা বিনির্মাণের লক্ষ্যে নিরন্তর ছুটে চলছেন তিনি। পৌরসভার প্রতিটি দেয়াল-ইট-পাথরে মিশে আছে তার শ্রমের ঘাম। ইতোমধ্যে শহরের সৌন্দর্যবর্ধনে বিভিন্ন রাস্তার পাশে, সড়ক ডিভাইডারে, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়ির আঙিনায় ফুলের গাছ লাগিয়ে পৌরসভাকে সুবাসিত ‘মডেল পৌরশহরে’ রূপান্তরিত করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন।
ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতি, সামাজিক, শিক্ষামূলক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত নির্ভীক, নিরহংকার, বিনয়ী, জনদরদি, মানবিক বোধসম্পন্য অসাম্প্রদায়িক, শিক্ষিত এই পৌরপিতা উচ্চকণ্ঠে বলেন, ‘আমি একা নই, পৌরবাসী সকলেই মেয়র। যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন সকলের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে সুখে-দুঃখে, সংকটে, মহামারি, দুর্যোগ মোকাবিলায় সবাইকে সাথে নিয়েই পৌরসভার উন্নয়ন করেছি। এরপরও হয়তো কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। করোনা মহামারিও অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। আপনারা আমার পাশে থাকুন, মেয়াদের শেষদিন পর্যন্ত অসর্ম্পূণ কাজগুলো শেষ করব ইনশাল্লাআল্লাহ। বিচক্ষণ জনগণ নিশ্চয়ই যোগ্য ব্যক্তিকে বেছে নেবেন পৌরপিতা হিসেবে। সামনের নির্বাচনে মেয়র না হলেও দুঃখ নেই, কারণ যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পৌরবাসীর জন্য সেরাটুকু দিয়েছি। প্রবাসের বিলাসী জীবন ফেলে, স্ত্রী-সন্তানকে স্নেহবঞ্চিত করেও মাটির টানে, নিজ এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে তৃপ্তি পেয়েছি। অগনিত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এটুকুই সান্ত্বনা। পারিবারিক পরিমণ্ডল থেকেই সমাজিক দায়বোধসহ জনকল্যাণে কাজ করার শিক্ষা পেয়ে ছাত্রজীবন থেকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত রয়েছি। আমি মনে করি, জনসেবার জন্য চেয়ারের প্রয়োজন নেই, ইচ্ছেটাই আসল।’
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২০০১ সালে পৌরসভায় উন্নীত হয় বিয়ানীবাজার পৌরসভা। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিট থাকায় নির্বাচিত একজন মেয়র পেতে পৌরবাসীকে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ১৬টি বছর। অবশেষে ২০১৭ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ আওয়ামী লীগ ও পৌরবাসীর প্রতি। নির্বাচনী কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না তার, তবে পরিবর্তনের অঙ্গীকার তথা বিয়ানীবাজার পৌরসভাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই লক্ষ্যে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পৌরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করেন, এখনো বিরামহীন চলছে জনকল্যাণে তার ছুটে চলা।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার সম্পর্কে মেয়র বলেন, ১৯৮৭ সালে হাইস্কুলে থাকাকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য ছিলাম। ১৯৯৩ সালে বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কলেজ শাখার সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হই। ১৯৯৫ সালে ছাত্রলীগের প্যানেলে কলেজ ছাত্র সংসদের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরমুক্ত ক্যাম্পাস গড়তে প্রচণ্ডভাবে আহত হয়েছিলাম। ২০০৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিয়ানীবাজার পৌর শাখার প্রথম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করছি এখনো। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ছয়জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হই।
পৌরসভা কেমন দেখেছেন প্রশ্নে এ মেয়র বলেন, বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে যেমনটি পেয়েছি- উন্নয়নের এবং অগ্রগতির কোনো ছোঁয়া লাগেনি পৌরবাসীর জীবনে। রাস্তাঘাট, নালা-নর্দমা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি নিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, দারিদ্র্য বিমোচন, গণশিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিসহ উন্নয়নের মৌলিক কাঠামোগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল।
মেয়র জানালেন তার নানা উন্নয়নের কথা। বলেন, নান্দনিক পৌরসভা গড়ার লক্ষ্যে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে পৌরসভার ড্রেন, রাস্তা, ডাম্পিংসহ নানা সমস্যা চিহ্নিত করে ময়লা-আবর্জনা ও বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়া পৌরসভাকে বাসযোগ্য করার নিরলস প্রচেষ্টায় নর্দমাযুক্ত পৌরসভা থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পৌরসভায় রূপান্তর করেছি। বিটুমিনের পরিবর্তে আরসিসি দ্বারা রাস্তার উন্নয়ন, প্রশস্তকরণ, নতুন রাস্তা আরসিসি দ্বারা ঢালাইয়ের পাশাপাশি স্ট্রিট লাইটের ব্যবস্থা করেছি। পাকা ড্রেন নির্মাণ, ভূমি অধিগ্রহণসহ বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। সুপেয় পানীয় জলের জন্য প্রায় নয় কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে হাউস কানেকশনের সুবিধায় মিনারেল ওয়াটার পাবেন পৌরবাসী। বাস টার্মিনাল ছাড়াও পাবলিক টয়লেট, পৌর এলাকায় ২০টি গভীর নলকূপ স্থাপন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ রাস্তায় সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য দ্রুততম সময়ে ভূমি জটিলতা, পারিবারিক বিরোধসহ নানা ধরনের বিরোধ-সমস্যা সমাধান করি। আলোকিত মানুষ মারা গেলে শোক ব্যানার, দোয়া মাহফিল এবং দলীয় প্রতিষ্ঠান, পূজা-পার্বণ, ওয়াজ মাহফিলে অনুদান দেই। করানোয় নিজ উদ্যোগে দিন-রাত বাড়ি বাড়ি খাবার, ওষুধ-কিট সংগ্রহ করে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেছি পরিবার পরিজনকে বঞ্চিত করে। অসংখ্য গরিব শিক্ষার্থীকে ভর্তি, ফরম ফিলাপ, বিয়ের সহযোগিতা এবং সরকারি করবস্থানকে বাউন্ডারি দিয়ে সংস্কার করা হয়েছে। পৌরসভার ভেতরে যেখানে কোনো রাস্তা ছিল না, সেখানেও মাটি দিয়ে নতুন রাস্তা তৈরি করে সমস্ত পৌরসভাকে সৌরবিদ্যুৎ দ্বারা আলোকিত করেছি জলবায়ু ট্রাস্টের অর্থায়নে। পৌরসভার অফিসকে বাউন্ডারি, টাইলস এবং সুন্দর ফার্নিচারে সজ্জিত করা হয়েছে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের সময় একটা নষ্ট ট্রাক এবং একটি রুলার ছিল। এখন চারটা ট্রাক, তিনটা রুলার, একটা এসকেলেটার আছে। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে সামাজিক ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা, পারিবারিক, জমি সংক্রান্ত বিরোধসহ নানা জটিল সমস্যার সমাধান করি।
শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে তার অবদান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিয়মিত পৌরসভায় জাতীয় দিবসগুলো পালন করছি। গান, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, রচনা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা প্রবর্তন করি এবং নাট্যোৎসবে পুরস্কারের আয়োজন করি। ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে এবং ফুটবল প্রীতি ম্যচের আয়োজনসহ মেয়র কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট অর্থাৎ আর্জেটিনা ও ব্রাজিল খেলায় লন্ডন, কলকাতা থেকে খেলোয়াড় এনে উৎসাহ দিয়েছি। হাডুডুতে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বিয়ানীবাজার। এ ছাড়া শিক্ষকরা যেন সুন্দর পরিবেশে বসে পাঠদান করতে পারেন সে ব্যবস্থা করি। লাইব্রেরিকে আধুনিক করার পাশাপাশি মেয়েদের খেলার ব্যবস্থাসহ প্রতিবছর পিকনিকে নিয়ে যাই। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে তিন দিনব্যাপী নাট্যোৎসবে থাকবেÑ বইমেলা, পুঁথিপাঠ, বিভিন্ন প্রতিযোগিতাসহ আমাদের ঐতিহ্যবাহী ‘চুঙ্গাপোড়া’ পিঠা উৎসব। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষানুরাগী সংগঠনে যুক্ত থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রথম মেয়র হিসেবে তার সার্থকতা প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়ন করা এবং জননেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপির দিকনির্দেশনায় বিয়ানীবাজার পৌরসভাকে একটি আধুনিক পৌরসভা গড়ার প্রত্যয়ে নেমে পড়ি। সামাজিক স্বৈরাচার উৎখাতের লক্ষ্যে, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধ পৌরসভা গঠনের জন্য জনগণ আমাকে পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগানো আমার প্রধান কর্তব্য ছিল। এলাকার মুরব্বি, যুব-জনতা ও সুশীল সমাজের পরামর্শ নিয়ে একটি সুপরিকল্পিত পৌরসভা অর্থাৎ পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও আদর্শ পৌর নগরী প্রতিষ্ঠা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। ১৬ বছরের সকল জঞ্জাল মুক্ত করে নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে একটি আধুনিক পৌরসভা উপহার দিয়েছি। পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে বাসটার্মিনাল নির্মাণ, শহর ও গ্রামের ১৫টি রাস্তা আরসিসি দ্বারা উন্নয়ন, গার্ড ওয়ালসহ বেশ কয়েকটি রাস্তার কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আট কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করেছি। পৌরসভার সব পরিবার মিনারেল ওয়াটার পাবে। যানজট নিরসনে কাজ করছি। ফুটপাত দখল মুক্ত হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন সংস্কার করেছি। সকল প্রকার নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, পৌরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে দিন-রাত কাজ করেছি। পৌরবাসী এর সুফল লাভ করেছেন। যা শপথ করেছিলাম তা সব করতে পেরেছি, এটাই আমার সার্থকতা।
জনগণের চাহিদার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পৌরসভা আমার একার নয়, পৌরবাসী সকলেই মেয়র। বর্তমানে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে শপথ নিয়েছিলাম যে, অল্প সময়ের মধ্যে বিয়ানীবাজার পৌরসভার কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে পারব। পৌরবাসীকে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম বলেই তারা আমায় ভোট দিয়েছেন। এদের চাওয়াকে মূল্যায়ন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এবং এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে যদি আবারো আমি মেয়র নির্বাচিত হই, ইনশাল্লাহ।
দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হলে কী কী করতে চান এ প্রশ্নে সফল এ মেয়র বলেন, সুচিন্তিত বিচার-বুদ্ধি দিয়ে জনগণ নিশ্চয়ই যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচন করবেন। যদি আমাকে নির্বাচিত করেন তাহলে একজন নিঃস্বার্থ রাজনৈতিক কর্র্মী, সমাজকর্মী হিসেবে বিয়ানীবাজারবাসীর পাশে থাকব যেমনটি অতীতে ছিলাম। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, পৌরবাসীর সমর্থন পেলে অল্পদিনেই বিয়ানীবাজার পৌরসভাকে বাংলাদেশের একটি সমৃদ্ধ ও মডেল পৌরসভায় রূপান্তরিত করতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ। পৌরবাসীর জীবনমান উন্নয়নই হবে আমার জীবনের ব্রত। জীবন দিয়ে হলেও আমি পৌরসভার মর্যাদা এবং জনগণের সম্মান রক্ষা করব। জনগণের কল্যাণে আরো উন্নয়ন করতে চাই, হয়তো সবকিছু করে যেতে পারবো না। তবে আজ থেকে ১০০ বছর পরে পৌরসভা কেমন হবে সেই পরিকল্পনায় আমি অগ্রসর হচ্ছি।
পৌরসভাকে নিয়ে তিনি আগামীর পরিকল্পনা জানান, বলেন, বিয়ানীবাজার পর্যটন সম্ভাবনার এলাকা। এ বিষয়টি মাথায় রেখে সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য একটি কমপ্লেক্স, বিনোদন পার্ক, অডিটরিয়াম, একটি স্থায়ী মঞ্চ, পৌর গ্রন্থাগার, আরেকটি বাস টার্মিনাল, আরেকটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, একটি হেলথ ইউনিট এবং পৌরসভাকে আলোকসজ্জিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি হাইস্কুল দরকার। রোড ডিভাইডর এসএস পাইপ দিয়ে সজ্জিত করা, শহরের প্রধান প্রধান সড়কে আকর্ষণীয় চত্বর নির্মাণ করতে চাই। ছয়টি ড্রেন নির্মাণসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্মশান সংস্কার, বাসুদেব মন্দির সংস্কার এবং প্রাইমারি স্কুলগুলোকে কীভাবে নান্দনিক করা যায় এ বিষয়ে ভাবছি।
জনগণ কি তার ওপর সন্তুষ্ট? বলেন, জনগণ আমায় নির্বাচিত করেছেন পৌরসভার উন্নয়নের জন্য। কতটা করতে পেরেছি সেটা তারাই বলবেন। এ ছাড়া পাঁচ বছর আগের পৌরসভা আর এখনকার পৌরসভার চিত্রই এই প্রশ্নের উত্তর দেবে।
মেয়র হিসেবে ব্যর্থতার জায়গাগুলো কী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রায় দুই বছর করোনা মহামারি বিশ্বকে অচল করে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমার পৌরসভাতেও। সে হিসেবে বলতে গেলে আমি কাজ করতে পেয়েছি মাত্র তিন বছর। ভয়াবহ মহামারির সময়টাতে ঘর কিংবা আপনজনের পাশে না থেকে দিন-রাত ছুটে গেছি পৌরবাসীর দ্বারপ্রান্তে। করোনার প্রভাবে পুরো উন্নয়ন কাজ থেমে না গেলেও জাতীয়ভাবে অনেক পিছিয়ে গেছি। নইলে এই দুই বছরে আরো অনেক কাজ করা যেত। এরপরও বহু পরিকল্পনার বাস্তবায়ন এখনো করতে পারিনি, অনেক কাজ সময়মতো হয়নি বলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
রাজনীতিতে আসার প্রেরণা সম্পর্কে তিনি বলেন, শিশুকাল থেকেই পারিবারিক পরিমণ্ডলসহ বিয়ানীবাজারের সৎ-যোগ্য প্রবীণ মুরব্বিয়ান, সাধু-পুরুষদের সঙ্গ এবং স্নেহ লাভ করে বড় হয়েছি। বাপ-দাদার মূল্যবোধ, আদর্শ, এলাকার ঐতিহ্য ও সামাজিক ন্যায়-নীতির দর্শন অন্তরে লালন করেছি পরম মমতায়। জননেতা নুরুল ইসলাম নাহিদের স্নেহধন্য হয়ে তারই রাজনৈতিক দীক্ষা ও আদর্শের একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে নিজেকে উৎসর্গ করেছি।
জীবনের লক্ষ্য সম্পর্কে মেয়র আব্দুস শুকুর বলেন, পরোপকার ও বিয়ানীবাজার পৌরবাসীর মঙ্গল কামনা ছাড়া আমার জীবনের আর কোনো লক্ষ্য নেই। দলমত, ধর্মবর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের কল্যাাণে নিজেকে উৎসর্গ করব। ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ই হবে আমার প্রশাসন পরিচালনার মূলনীতি। দায়িত্বে না থাকলেও মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করতেও আমি অঙ্গীকারাবদ্ধ।
সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করছি।
তিনি যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা। একইসঙ্গে বিয়ানীবাজার কামিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি, বিয়ানীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতন পরিচালনা কমিটির সদস্য, বিয়ানীবাজারের গোলাবশাহ্ সমাজ কল্যাণ সংস্থার সাধারণ-সম্পাদক (২০০০-২০১১), গোলাবশাহ্ হাফিজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য (১৯৯৫-২০১৪), বিয়ানীবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জি.সি. দেব স্মৃতি পরিষদের সদস্য সচিব (২০০৬ হতে), মুক্তিযোদ্ধা সাংস্কৃতিক কমান্ড, বিয়ানীবাজার কমান্ডের সভাপতি, বিয়ানীবাজার পৌরসভা ঠিকাদার সমিতির সাবেক সাধারণ-সম্পাদক, বিয়ানীবাজার ফাউন্ডেশনের সাবেক শিক্ষা সম্পাদক এবং বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ-১৯৯৫-এর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক।
আজকালের খবর/আরইউ