জায়েদ খান ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ
পিরোজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৫:২৪ পিএম
চিত্রনায়ক জায়েদ খান ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে পিরোজপুরে হিন্দুদের জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পিরোজপুর পৌর শহরের মাছিমপুর এলাকার এলজিইডি সংলগ্ন বাইপাস সড়ক এলাকায় পাঁচতলা বিশিষ্ট সার্জিকেয়ার ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক নামের একটি ক্লিনিক ও তার জমি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।

ওই জমির মালিক ডাক্তার বিজয় কৃষ্ণ দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের।

জানা গেছে, শহরের বাসষ্ট্যান্ড সংলগ্ন বাইপাস এলাকায় চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার নির্মিত ওই ক্লিনিকটির জমি দখলের অভিযোগ করেছেন চিকিৎসকের স্ত্রী ও কন্যা। এ ঘটনায় ওই চিকিৎসকের স্ত্রী সাবেক কলেজ শিক্ষিকা গীতা রানী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।  

ভুক্তভোগী গীতা রানী জানান, জায়েদ খানসহ তার মেঝো ভাই ওবায়দুল হক পিন্টু ও বড় ভাই শহীদুল হক মিন্টু ২০১৬ সালের মার্চে আমাদের নিজস্ব জমিতে স্থাপিত সার্জিকেয়ার ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিকের ভবন দখল করে। ওই ভবনের পাঁচতলার ওপরে আমি আমার কন্যাকে নিয়ে বসবাস করতাম। আমাদের সেখান উচ্ছেদ করতে আমার ও মেয়ের ওপর হামলাও করেছে। শুধু তাই নয় বাসার বিদ্যুৎ ও পানির লাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। আমার স্বামী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ সেই থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। এ বিষয়ে আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রতিনিয়ত তারা বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, ২০১৬ সালের ২১ মার্চ একটি সিনেমা শুটিংয়ের কথা বলে ওই ভবনের অবস্থান নেন জায়েদ ও তার লোকজন। কিন্তু সেদিন গভীর রাতে আমি ও আমার তখন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে অনন্যা হালদারকে জায়েদের লোকজন মারধর করে ও পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। আমার স্বামীকেও মারধর করে। এমন ঘটনা কয়েকবার ঘটায় পিরোজপুর সদর থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছি। এরপর তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়। তারা আমাদের এখান থেকে চলে যেতে বলে। জায়েদের বড় ভাই শহীদুল হক মিন্টুর প্রশাসনের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ থাকায় আমাদের কথা শোনে না। 

গীতা রানীর অভিযোগের বিষয়ে জায়েদ খানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ওই জমি বা ক্লিনিকের মালিক আমি না। ক্লিনিকের মালিক আমার মেঝো ভাই পিন্টু। পৈত্রিক সম্পত্তি ছাড়া পিরোজপুরে আমার কোন জমি নাই। শিল্পী সমিতির নির্বাচনের বিরোধের জের ধরেই আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা হয়েছে। আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই এমন অভিযোগ। ’ 

ওই হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেদিন একটি সিনেমার শুটিং করতে পিরোজপুর অবস্থান করছিলাম। এ সময় আমার ভাইয়ের ওই ক্লিনিকে রাতে অবস্থান করি। কিন্তু এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। যদি এমন কিছু হতোই তাহলে, এতদিন পরে কেন এ অভিযোগ করা হচ্ছে?

এ বিষয়ে জায়েদ খানের বড় ভাই শহীদুল হক মিন্টু বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি এলাকায় (পিরোজপুর) যাই না। ওই জমিও চিনি না। আমাকে নিয়ে অনর্থক তারা অভিযোগ তুলছে। ওই জমি আমার মেঝো ভাই কিনেছেন বলে জানি। 

জায়েদ খানের মেঝো ভাই ওবায়দুল হক পিন্টুর বলেন, ২০১৩ সালেই ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার বিজয় হালদারের কাছ থেকে ২ কোটি টাকার বিনিময় জমিসহ ভবনের অর্ধেক (দক্ষিণ পাশ) কিনেছি। আমি ব্যবসার কারণে পরিবার নিয়ে ঢাকা থাকায় ওই ক্লিনিকে বসার সুযোগ হতো না। তখন বিজয় হালদারে ওই ক্লিনিকের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে মাসে লভ্যাংশের অর্ধেক দিবেন বলে চুক্তি করেন। মাত্র দু’মাস লভ্যাংশের টাকা দিয়ে পরে আর দেননি। এর পরে আবার বাকী জমিও আমাকে দিবেন বলে ৮৯ লাখ টাকা নেন। এ সংক্রান্ত সকল কাগজ পত্র আমার কাছে আছে। তিনি ওই ক্লিনিকটি চালানোর জন্য ডাক্তারের নির্ধারিত ভবন হিসাবে ওই ভবনের পঞ্চম তলায় পরিবার নিয়ে বাস করতেন। তার কাছে জমির বাকি অংশের দলিল চাইলে নানা টাল-বাহানা শুরু করেন।  

পিন্টু আরো বলেন, এমন কি আমি গীতা রানী ও তার স্বামীকে ওই ভবন কেনার জন্য দেওয়া টাকা ফেরত চাইলেও তাও তিনি দিচ্ছেন না। আমি এই ক্লিনিকের ব্যবসা করতে গিয়ে এখন আর্থিকভাবে শেষ হয়ে গেছি। ওই ক্লিনিকের মালিক আমি নিজে, আমার কোন ভাই এর সঙ্গে জড়িত নয়। 

সরেজমিনে সার্জিকেয়ার ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক ঘুরে দেখা গেছে, ওই ক্লিনিকের তৃতীয় তলায় রয়েছে পুলিশের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প। সেখানে কয়েকজন পুলিশ অবস্থান করছেন।  

সেখানে থাকা এক পুলিশ সদস্যর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশে ও একটি পরিবারের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা এখানে দায়িত্ব পালন করছি। 

এ ছাড়া ভবনের পঞ্চম তলার দক্ষিণ পাশে অবস্থান করছেন ভুক্তভোগী গীতা রানী ও তার পরিবার। তবে তাদের কক্ষের গেটে তালা ঝুলছে। নিচে কিছু রোগীর দেখা যায়। সেখানে মাত্র একজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন।  

ক্লিনিকের জিএম হিসাবে দায়িত্বে থাকা পুলক দাসের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ওই  জমি ও ভবন ক্রয় করেছেন ওবায়দুল হক পিন্টু। ওই ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে মো. ওবায়দুল হক পিন্টুর একটি নাম ফলক রয়েছে। তবে ওই কক্ষটি বন্ধ রয়েছে।

এ ব্যাপারে  জেলা  পুলিশ সুপার (এসপি) মো: সাঈদুর রহমান জানান, এই জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের কারণে ভুক্তভোগী পরিবার একটি মামলা দায়ের করেছেন। আর সে কারণে অনেক আগে থেকে আদালতের নির্দেশে ভুক্তভোগী পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

পৌরসভার স্থানীয় পৌর কমিশনার সাইদুল্লাহ লিটন জানান, ওই জমি ও ভবনের বিষয়ে একাধিকবার শালিশী বৈঠক হয়েছে। তখন জেনেছি একটি অংশ ওবায়দুল হক পিন্টু  কিনেছেন। পরে বাকি অংশও ক্রয় করতে সে টাকা দেন। কিন্তু ওই অংশের দলিল চাইলেও এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়। পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মালেকসহ স্থানীয়দের নিয়ে আমি একাধিকবার শালিশ বৈঠকে বসেছি। গীতা রানী হালদার কারও কোন সালিশ না মানায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

আজকালের খবর/বিএস 








সর্বশেষ সংবাদ
নান্দাইল পৌর সদরে এক রাতে তিন বাসায় চুরি
শিক্ষাবিদ নূরুল ইসলাম ভাওয়ালরত্নের ইন্তেকাল
নতুন বছরে জঙ্গি মোকাবিলায় প্রস্তুত র‌্যাব: ডিজি
বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুব হোসেন মারা গেছেন
২০২৩ হোক অগ্রযাত্রার আরেকটি বছর: সজীব ওয়াজেদ জয়
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কাজী নজরুল ইসলাম ও বাংলা গান
এভাবে চলে যেতে নেই
পরীমনির জীবনটা আমার জীবনের মতো: তসলিমা
কেউ আক্রমণ করলে ছাড় দেবো না: কাদের
২০২৩ হোক অগ্রযাত্রার আরেকটি বছর: সজীব ওয়াজেদ জয়
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft