শিরোনাম: |
শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলা কেন
ইমরান হুসাইন
|
এইছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি। একজন সন্তান যেমন তার ইচ্ছা অনিচ্ছার কথাগুলো প্রকাশ করতে পারে তার অভিভাবকের নিকট তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের চাওয়া-পাওয়া, ইচ্ছা আকাক্সক্ষার কথা প্রকাশ করে তাদের অভিভাবকের নিকট। সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা ওই সেক্টরে দ্বায়িত্বরত কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা। একজন শিক্ষকের দ্বায়িত্ব যেমন শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলো দান করা, তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা বা শিক্ষা দেওয়া যেটাই বলি না কেন শিক্ষার্থীর ভালোর জন্যই শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ভালো-মন্দ বিষয়গুলো দেখার দ্বায়িত্বও শিক্ষকের ওপরেই বর্তায় কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধান না করে যখন তাদেরকে দমানোর জন্য পুলিশ দিয়ে পেটানো হয় তখন সেটা স্বৈরাচারী হিসেবেই রূপ নেয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে এমন ঘটনাই ঘটেছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। একজন উপাচার্যকে সব সময়ের জন্য চোখ-কান খোলা রাখতে হয়। একজন নিম্নপদস্ত ব্যক্তি কোনো ভুল-ত্রুটি করলে তা সংশোধন বা সমন্বয় করার জন্য উচ্চপদস্ত কেউ একজন থাকে যার কাছে সমাধান মেলে। কিন্তু একজন সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর বা সর্বোচ্চ আসনে অবস্থানরত ব্যক্তির কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে অবশ্যই সকল কিছুর সত্যতা যাচাই-বাছাই করে তাকে কোনো বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হয়। শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়া কোনো জিনিসের প্রয়োজনীতা মিটানোর বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকট শিক্ষার্থীদের দাবি দাওয়া থাকবে এটি খুব স্বাভাবিক। তাদের চাওয়া পাওয়ার কথা, সুবিধা-অসুবিধার কথা দ্বায়িত্বরত ব্যক্তিদের জানাবে, নিজেদের অধিকার বুঝে নিবে এটাই বাস্তব। কারণ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অধিকার আদায়ে অনেক বেশি সচেতন থাকে। কারণ তাকে ভাবতে হয় অন্যদের কথা। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে না পারে, নিজ অধিকার বুঝে নিতে না পারে তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অধিকার বুঝে নেওয়া তো দূরের কথা নিজের দূর অবস্থার কথাই প্রকাশ করতে পারবে না। দেশের একজন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী হয়ে যদি একজন শিক্ষার্থী অন্যায়কে অন্যায় বলতে না পারে তবে পরবর্তী প্রজন্ম হবে ক্ষমতার অপব্যবহারের কাছে কোণঠাসা, আগামীর তরুণ প্রজন্মে হবে বাকপ্রতিবন্ধী এ সব কিছুই বিবেচনা করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। খুব সাধারণভাবে একটা জিনিস ভাবা উচিৎ যে কখন মানুষ কঠিন অবস্থা বা বক্র পথ বেছে নেয়? একটা হলের সমস্ত শিক্ষার্থীরা কখন আন্দোলনে নামে? কখন তারা নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে একতাবদ্ধ হয়। স্বাভাবিকভাবেই উত্তর আসে যে, যখন দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থী তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, যখন অবহেলার শিকার হতে হয়। একাধিকবার দাবি দাওয়া জানিয়েও যখন তা ফলপ্রসূ না হয় ঠিক তখনই আন্দোলন অনশনে আসতে বাধ্য হয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন চুপ থাকার পর তাদের অধিকার আদায়ের জন্যই আন্দোলনে নেমেছিলেন। প্রশাসনকে তাদের সমস্যার কথা জানানোর জন্য একত্র হয়েছিলেন শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে। কিন্তু ঘটনাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাঞ্চিত হয়েছেন পুলিশের নিকট। পুলিশ তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর আপনা-আপনি আসেনি। শিক্ষার্থীদের ওপর মনের ইচ্ছায় আক্রমণ করেনি। কোন শক্তির ইশারায় তারা শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করলো! কেন শিক্ষার্থীদের রক্তে শাবিপ্রবির মাটি ভিজলো এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরানোর আগে তাদের অভিযোগ, দাবি, তাদের কথা শোনার কি কোনো প্রয়োজন বোধ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন? প্রতিবেদনে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত, হলের নানা অব্যবস্থাপনা এবং প্রভোস্টের দুর্ব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের অব্যবস্থানার কথা বা অভিযোগকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মিথ্যা বা বানোয়াট বলে অভিহিত করতে পারে না। আবার শিক্ষার্থীরা ষড়যন্ত্র করে হল প্রোভোস্টের নামে এমন অপবাদ দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা উপাচার্যের কর্তব্য ছিল এই প্রেক্ষিতে সুষ্ঠ তদন্ত করা এবং ন্যায়ের পক্ষে থাকা। কিন্তু এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলা, রাবার বুলেট নিক্ষেপ, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা কখনো ঠিক হয়নি। এটি সত্য যে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ করেছেন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। হলের অব্যবস্থাপনাকে নিরাময় করার জন্য। ন্যায়ের জন্য। উপাচার্য মহোদয় চাইলেই খুব সহজে এটি সমাধান করতে পারতেন তৎপরিবর্তে পুলিশকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর এভাবে আক্রমণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। স্বাধীনতার আগেও পুলিশের নিকট মার খেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও পুলিশের হাতে মার খাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পাকিস্তানি আমলে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমনের ফলে শিক্ষার্থীদের পাশে সব সময় ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু আজ স্বাধীন দেশে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ কতৃক হামলা চালানো হয়েছে যা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর এমন বর্বর হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে এবং উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলা চলতেই থাকবে। দেশের সেরা বিদ্যাপীঠগুলোর শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলা মেনে নেওয়া যায় না। লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আজকালের খবর/আরইউ |