প্রকাশ: সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১, ১:৩৮ AM
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলেও ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করেছে বিশ্ব। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সব থেকে বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কোভিড পরিস্থিতিতেও গত অর্থবছরে (২০২০-২১) দেশটিতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশেরও বেশি। আগামী দুই বছরের পোশাক ক্রয় চাহিদার ওপর ভিত্তি করে ইউএসএফআইএ কর্তৃক চালানো এক জরিপে দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আরো পোশাক ক্রয় করতে আগ্রহী। চলতি বছরের এপ্রিল-জুন এই তিন মাসব্যাপী চালানো জরিপে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল প্রতিষ্ঠানগুলোর পছন্দের তালিকায় ২য় অবস্থানে বাংলাদেশ। রেটেইলারদের প্রথম পছন্দ ভারত। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের রেটেইলাররা ভারত এবং ভিয়েতনাম থেকে যথাক্রমে ৮৭ এবং ৭৭ শতাংশ পোশাক সরবরাহ করেছে। পোশাক সরবরাহের তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ থেকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র পোশাক সরবরাহ করেছে ৭৩ শতাংশ। যদিও জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, রিটেইলারদের চীন থেকে পোশাক সরবরাহে আগ্রহ সব থেকে কম, কিন্তু গত বছর চীন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ৯৩ শতাংশ পোশাক সরবারহ করেছে। মার্কিন রিটেইলারদের মতে, বাংলাদেশের সময় মতো পোশাক পৌঁছানো এবং শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ নিয়ে যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। কিন্তু সস্তা শ্রমের সুবাদে নিম্ন উৎসমূল্য এবং বাণিজ্য ব্যয় বিবেচনায় বাংলাদেশ এখনো আকর্ষণীয়। জরিপে আরো দেখা গেছে, এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মূল্যসুবিধা বেশি পেলেও পোশাকের বৈচিত্র্যের বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে আছে। নতুন পণ্যের চাহিদায় বাংলাদেশের থেকে অনেক গুণ বেশি এগিয়ে আছে ভিয়েতনাম।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইফতেখার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ এখন ভালো পণ্য তৈরি করছে। সেই পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। এর পাশাপাশি মূল্য সুবিধার কারণেই অনেক ক্রেতা বাংলাদেশমুখী হচ্ছেন। বাংলাদেশ সাপ্লাই চেইনেও বেশ উন্নতি করেছে। পণ্য বিপণন কৌশলে পরিবর্তন এলেও আরো উন্নতি করতে হবে। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের পোশাক খাতসংশ্লিষ্টদের দক্ষতা অনেক বেড়েছে। বৈশ্বিকভাবে এখন স্বচ্ছতার বিশেষ গুরুত্ব তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বচ্ছ। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেকসই পণ্য তৈরির পথেও হাঁটতে শুরু করেছে। এসব কারণেই মার্কিন ক্রেতাদের বাংলাদেশ থেকে পণ্য ক্রয়ের আগ্রহ বেড়েছে। তবে অসুবিধার ব্যাপার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ক্রয় বাড়াতে চাইলেও, ভেন্ডর সংখ্যা সীমাবদ্ধ করতে চাইছে। এক্ষেত্রে বাজার আরো প্রতিযোগিতামূলক হবে। কিন্তু এটির ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দাম নিয়ে বিপদে পড়বে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। বিকেএমইএর হিসাব অনুযায়ী এ বছর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক সরবরাহে প্রবৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। পোশাক রপ্তানিকে আরো বেশি গতিশীল করার ব্যাপারে বিজিএমএইএ সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সারা বিশ্বেই ফ্যাব্রিকের গঠনে পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগে যেখানে ৭০ শতাংশই কটন ব্যবহার করা হতো, বর্তমানে সেখানে ৭০ শতাংশ কৃত্রিম তন্তু ব্যবহৃত হচ্ছে। কটন আর কৃত্রিম তন্তু ব্যবহার করে একটি টি-শার্ট বানাতে একই সময় লাগে। কিন্তু কৃত্রিম তন্তুর ক্ষেত্রে দাম বেশি পাওয়া যায়। এতে রপ্তানি মূল্য বেড়ে যায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এক্ষেত্রে নতুন করে কারখানা করার প্রয়োজন নেই। শুধু কিছু উন্নত মানের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন। সরকার যদি এ ধরনের ফ্যাব্রিক ব্যবহার করে রপ্তানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করে, তাহলে সবাই এতে এগিয়ে আসবে। ভিয়েতনাম এগুলো ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও সেদিকেই যেতে হবে। এনএমএস।