মঙ্গলবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
প্রিন্ট সংস্করণ
সীমানা পেরিয়ে মহল্লায় পশু: হাট শুরু আজ
# গাবতলীতে ২০টি জাল টাকা শনাক্তকরণ যন্ত্র
জাকির হুসাইন
প্রকাশ: শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১, ১:০৫ এএম

রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের নির্ধারিত উন্মুক্ত স্থানে আজ আনুষ্ঠানিক কোরবানির পশুর হাট শুরুর কথা থাকলেও আগে থেকেই পশুতে ভরে গেছে হাটের নিধারিত স্থান। তাই পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে পর্যন্ত গড়িয়েছে হাটের পরিধি। সামাজিক দূরত্ব দূরে থাক পশু আর মানুষের ঠেলাঠেলি, তার ওপর গাবাদিপশুর মলমূত্রে থৈথৈ করা রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে মহল্লাবাসীর জীবন ওষ্ঠাগত ইতোমধ্যেই। আজ আনুষ্ঠানিক হাট শুরু হলে লকডাউনের বিধি-নিষেদের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি আশঙ্কা করছেন পশুর হাট সংলগ্ন এলকার মানুষ। কারণ বিধি-নিষেধে তাও জরুরি কাজ যেমন ওষুধ কিনতে কিংবা হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয় যেত, কিন্তু এখন পশু এবং মানুষে ঠাসা পথে কোনোভাবেই চলাচল করা সম্ভব নয় তা জরুরি কাজেই হোক আর রোগীর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজনেই হোক।
এ ব্যাপারে ইজারাদাররা জানিয়েছেন, কোরবানির ঈদের প্রধান ইস্যু হলো পশু কোরবানি, এটা রাজধানীবাসীর কাছে সুন্দরভাবে পৌঁছে দিতে আমাদের এই আয়োজন। তাছাড়া এটা মাত্র কয়েক দিনের ব্যাপার। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের সমস্যা হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন তারা। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন।  
ঈদুল আজহার দিনসহ মোট পাঁচ দিন পশুর হাটগুলোতে কেনাবেচা শুরুর কথা থাকলেও একদিনে আগে হাটগুলোতে পশু বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের কারণে ভিড় এড়াতে অনেকে আগেভাগেই গরু কিনছেন। তাছাড়া ঈদের আগে শেষ শুক্রবার হওয়ায় হাটগুলোতে গতকাল ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের অনেকে গরুর দরদাম করছেন আবার অনেকে গরু কিনে বাসায় ফিরছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, গত দুইদিনের তুলনায় গতকাল ক্রেতাদের ভিড় ছিল অনেক। গত দুই দিন দর্শনার্থী থাকলেও গরু তেমন বেচাকেনা হয়নি। কিন্তু শুক্রবারের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। সকাল থেকেই হাটগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ঈদের আগে শেষ শুক্রবার হওয়ায় হাটগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
রাজধানীর গাবতলী স্থায়ী গবাদি পশুর হাট, বসিলার স্থায়ী হাট ও ধোলাইখাল ও দনিয়ার অস্থায়ী হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কোভিড মহামারির মধ্যে এবার দ্বিতীয়বারের মতো কোরবানির ঈদ উদযাপিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে কোরবানির পশু কিনতে হবে নগরবাসীকে। সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে রাজধানীর সকল হাটেই সজাগ দৃষ্টিতে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
গাবতলী পশুর হাটে দেখা গেছে, হাটের মূল অংশ আগেই গরু দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেছে। এখন হাটের চারপাশে বাড়ানো হয়েছে পরিধি। বিভিন্ন জেলা থেকে গরু-মহিষ নিয়ে আসা ট্রাকগুলো জড়ো হচ্ছে বেড়িবাঁধে। সেখান থেকে গরু নামিয়ে বাঁধা হচ্ছে হাটের বর্ধিত অংশে।
হাটের ইনচার্জ সজিব সরকার জানান, প্রতি ঘণ্টায় অন্তত ১২টি ট্রাক গবাদি পশু নিয়ে আসছে দেশের বৃহত্তম এই হাটে। হাসিল ঘর ৬টা চালু হয়েছে। আর তিনটি চালু করা হবে বলে জানান তিনি। সজিবের ভাষ্যমতে, হাটে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের উদ্দেশ্যে সার্বক্ষণিক মাইকিং করা হচ্ছে। হাট মালিকের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য আমরা ৪০ জন দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া রাইটার ও চেকার রাখা হয়েছে ৫০০ জনের বেশি। হাটটি ঘুরে দেখা যায়, একদিকে যেমন ট্রাকে করে গরু আসছে, অন্যদিকে চলছে দামাদামি ও বিক্রি। হাটে আসা বেপারি ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গাবতলী হাটে ক্রেতা আনাগোনা ছিল নামমাত্র। তবে শুক্রবার সকাল থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। বিকাল ক্রেতা আনাগোনা আরো বৃদ্ধি পায়।
ব্যাপারি ও খামারিদের থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এবার গরুর দাম কিছুটা বেশি। তবে বাড়তি দামের দিকে নজর না দিয়ে ক্রেতারা ভালো ও পছন্দের দিকে নজর দেবেন, এমন প্রত্যাশা বিক্রেতাদের। রাজশাহী থেকে ছয়টি গরু নিয়ে এসেছেন জামাল। তিনি
বলেন, বৃহস্পতিবার ভোরে হাটে এসেছি। আইসাই একটা গরু বিক্রি করছি। শুক্রবার আরো দুইটা বিক্রি হইছে। নাটোর থেকে চারটি গরু নিয়ে গাবতলী হাটে এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাগর নিজের খামারে নিজ হাতে লালন-পালন করা গরু। খাবারের দাম বেশি, যাতায়াত খরচ বেশি। তাই দামও একটু বেশি। হাটে কাস্টমার থাকলে চিন্তা চাই।
গাবতলী হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এছাড়া হাটের মধ্যে পুলিশ ও পুলিশের এলিট ফোর্সের টহল নিয়মিত চলছে। জাল টাকা ও প্রতারক চক্রের বিষয়টি মাথায় রেখে সাদা পোশাকে হাটে রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
এদিকে ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু কেনাবেচায় বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ হাতবদল হয়। জালিয়াতরাও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। হাটগুলোতে কোনো বাধা ছাড়াই সহজেই জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এই সুযোগে অনেক অসৎ ব্যক্তি জাল টাকা দিয়ে কোরবানির গরু কেনে। ফলে বিপাকে পড়েন হাটের বেপারি ও গৃহস্থ। এসব কথা মাথায় রেখে গাবতলীর ১০টি হাসিল ঘরে দু’টি করে মোট ২০টি জাল টাকা শনাক্তকরণ যন্ত্র বসানো হয়েছে।
গাবতলীর গরু হাটের পরিচালক মো. রাকিব ইমরান বলেন, জাল টাকা শনাক্তে হাটে ২০টি যন্ত্র বসানো হয়েছে। আমরা আশা করি, কেউ জাল টাকা হাটে তোলার সাহস পাবে না। জাল টাকা ধরা পড়বে। তিনি আরো বলেন, অনেক কষ্ট করে একজন গৃহস্থ ও বেপারি হাটে গরু তোলেন। কেউ যদি জাল টাকার খপ্পরে পড়েন তবে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। এসব কথা বিবেচনা করেই ২০টি যন্ত্র বসানো হয়েছে।
গাবতলী স্থায়ী হাটের পাশাপাশি রাজধানীতে বসেছে কয়েকটি অস্থায়ী হাট। সিটি করপোরেশন থেকে ইজারা দেওয়া এসব হাটে কয়েকদিন ধরেই আসছে কোরবানি উপযোগী পশু। বসিলা হাটের বেপারি ও খামারিদের ভাষ্যমতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিক্রি মন্দা ছিল। শুক্রবার সকাল থেকে আশার আলো দেখতে পেয়েছেন তারা। হাটে আসা অধিকাংশ দর্শনার্থীই ক্রেতা। ফলে বিক্রিও হচ্ছে আশানুরূপ।
এছাড়া ধোলাইখাল, শনির আখড়া, দনিয়া ও রায়েরবাগ এলাকার অস্থায়ী হাট ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি গরু, ছাগল বেঁধে রাখা হয়েছে। সকালে বেশ কিছু গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মেরাদিয়া আফতাবনগর হাটে সকাল থেকে অনেক গরু বিক্রি হতে দেখা যায়। সেখানে হাসিল ঘরে পশুর বিক্রির হাসিলও আদায় হচ্ছিল যথাযথভাবে।
জানতে চাইলে সেখানকার ইজারাদারের পক্ষে নিযুক্ত হাট ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বশীল কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ক্রেতা আসছে। ব্যাপারিদের অনুরোধে আমরা বিক্রি শুরু করেছি। তবে পুরোদমে বিক্রি শুরু হবে কাল থেকে। তিনি বলেন, টুকটাক কিনলেও আমরা তো আর হাসিল ছাড়া দিতে পারি না। রাজধানীর বেশিরভাগ হাটেই আজ (শুক্রবার) বিক্রি হচ্ছে। এই হাটের ইজারাদাররা জানিয়েছে, এ পর্যন্ত হাটে প্রায় ১১ হাজার গরু এসেছে। শেষ মুহূর্তে গরু আসার পরিমাণ আরো বেড়েছে। শনিবারের আগে প্রায় ১৫ হাজার গরু এই হাটে পৌঁছাবে বলে তাদের ধারণা। তবে এ পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশ কম।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর সব হাটেই ছোট কিংবা বড় সব ধরনের গরুর দাম বেশি হাঁকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারা দাম শুনেই ব্যবসায়ীদের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকছেন, কেউ সাহস করে দাম বলছেন,  আবার অনেকে দাম না বলেই সামনে হাঁটছেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, গতবছর যে গরু ৭০-৮০ হাজার টাকায় কেনাবেচা হয়েছে। এ বছর একই গরুর দাম এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা চাচ্ছেন বিক্রেতারা। এসব গরুতে মাংস হবে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় মণ। তারা দুই মণ থেকে চার মণ মাংসের গরুর দাম হাঁকাচ্ছে দুই লাখ টাকা, চার মণে বেশি হলেই দুই লাখ টাকার বেশি দম হাঁকাচ্ছে। তারা বলছেন, গতবছর তিন মণ মাংসের গরু বিক্রি হয়েছে এক লাখ টাকার নিচে। এবার দাম চাচ্ছে একেবারে দ্বিগুণ।
গরুর দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে কি না? জানতে চাইলে কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আগত রিপন মাহমুদ বলেন, সবকিছুর দাম বেশি। গরুর দাম কমবে কেন? গরু কিনে ছয় মাস-এক বছর পালছি, খরচ হয়েছে না। আফতাবনগর হাটের ইজারাদার ওমর ফারুক দিপু বলেন, ক্রেতা কম। এখনও বাজার জমেনি। গরুর দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে। কাল (শনিবার), পরশু (রোববার) বিক্রি বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। দেশি ছোট গরুগুলো কালকের (শনিবার) মধ্যে চলে আসবে। এগুলোর চাহিদা বেশি। এগুলো এলে বড় গরুর দাম কমবে।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আমরা কোরবানির পশু কিনতে হাটে যাচ্ছি, কিন্তু অনেকেই ঠিকমতো মাস্ক পরছি না। মাস্ক না পরলে আমরা নিজেরাই কোরবানি হবো। গতকাল ‘মাস্ক আমার সুরক্ষা সবার’ নামে একটি ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। আতিকুল ইসলাম বলেন, যিনি হাটে গিয়ে পশু কিনবেন তিনি এমন বিক্রেতার থেকে পশু কিনবেন না যিনি মাস্ক পরেননি। আবার কোনো পশু বিক্রেতা এমন গ্রাহকের কাছে পশু বিক্রি করবেন না যিনি মাস্ক পরেননি। এটা সবার প্রতি আমার আহ্বান, আমার মেসেজ। কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা মাস্ক বা পরলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সিটি করপোরেশন জরিমানা করবে বলেও সতর্ক করেন আতিক। নিজ বক্তব্যকালে সমাজের অবস্থাসম্পন্ন নাগরিকদের কাছে তিনি আবার ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা অনুদানের আহ্বান জানান। শক্তি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, এটুআই এই ক্যাম্পেইনের সহযোগী পার্টনার। এনএমএস।









সর্বশেষ সংবাদ
নতুন জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বিজ্ঞানী ও কৃষি শ্রমিকদের অবদান রয়েছে: কৃষিমন্ত্রী
ভোটের প্রচারণায় এগিয়ে মনোজ বৈদ্য
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে সমতা চায় টিআইবি
স্বাগতম ২০২২, বিদায় ২০২১
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সুবাহর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন
তাদের মাখো মাখো ‘প্রেমের প্রাসাদ’!
‘আমাকে জায়গা দিন, এটা আমার প্রাপ্য’ : লালকেল্লার দাবিদার মোগল সম্রাজ্ঞী
চা দোকানিকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা
আমি অনেকটাই ভেঙে পড়েছি : শামীম ওসমান
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft